জাতীয়

ঈদযাত্রায় ১৪ দিনে ২৪০ সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ২৮৫

  সবুজ আলো ডেস্ক ২ মে ২০২৩ , ৮:৪১:৪৪

এবারের ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে ১৪ দিনে (১৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল) দেশে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮৫ জন । আহত হয়েছেন অন্তত ৪৫৪ জন। মঙ্গলবার (২ মে) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সেফটি ফাউন্ডেশন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে নারী ২৬ জন ও শিশু ৫৩ জন। ১২৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩৩ জন, যা মোট নিহতের ৪৬.৬৬ শতাংশ। এছাড়াও এই সময়ে ৫টি নৌ-দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ৬১ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৩৩ জন; বাস যাত্রী নয়জন; ট্রাক-পিকআপ-ট্রলি আরোহী ১৫ জন; প্রাইভেটকার আরোহী দুজন; থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৫১ জন; স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-চাঁন্দের গাড়ি- টমটম-লাটাহাম্বা) ১০ জন এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল আরোহী ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৩৬.৬৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৪.৫৮ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ১৭.৯১ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে এবং ১০.৮৩ শতাংশ শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরনও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, দুর্ঘটনাসমূহের ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ২২ দশমিক শূন্য আট শতাংশ পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

ঈদযাত্রা ও দুর্ঘটনা পর্যালোচনায় বলা হয়, এবারের ঈদুল ফিতরে রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ১ কোটি মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছে এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৪ কোটি মানুষ যাতায়াত করেছে। ঈদের আগে-পরে যথেষ্ট ছুটি থাকা, পদ্মা সেতু চালু হওয়া, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক কয়েকটি ওভারপাস-সহ ফোর লেন হওয়া, দেশের বিভিন্ন সড়কের অবস্থা ভালো থাকা, বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং সরকারের বাড়তি তৎপরতা থাকা ইত্যাদি কারণে ঈদযাত্রা তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক ছিল। কোথাও তেমন অসহনীয় যানজট হয়নি। দুর্ঘটনাও অনেকটা কম ঘটেছে। গত বছর ঈদুল ফিতর উদযাপনের সময় ২৮৩টি দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। এই হিসাবে এবছরের ঈদুল ফিতরে দুর্ঘটনা কমেছে ১৫.১৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি কমেছে ২৪.২০ শতাংশ।

তবে ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইন করায় টিকিট সংগ্রহ করতে মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। ঈদে ঘরমুখী যাত্রার চেয়ে ফিরতি যাত্রায় যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। যেটা মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি।

ঈদযাত্রায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’তে ৭টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে। সবগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে অতিরিক্ত গতির কারণে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই।

ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধি-নিষেধ না থাকা এবং পদ্মা সেতুতে গতি নিয়ন্ত্রণ ও লেন মানার শর্ত সাপেক্ষে মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ থাকার কারণে সবগুলো মহাসড়ক ধরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ মোটরসাইকেলে গন্তব্যে ফিরেছে। ফলে বাস ও ট্রেনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়েনি। উল্লেখ্য, মানসম্পন্ন গণপরিবহন সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী না হওয়ার কারণেই মানুষ মোটরসাইকেলে দূরের গন্তব্যে যাতায়াত করছে। এটা উদ্বেগের বিষয়। কারণ মোটরসাইকেল ৪ চাকার যানবাহনের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই মোটরসাইকেল কোনোভাবেই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না।