মতামত

জীবনের চাকা চলছে না চাকার কারিগরদের

  মাসুদ আহমেদ ২৭ মার্চ ২০২৩ , ১১:১৭:২৬

প্রযুক্তির বাহারি উন্নয়নের ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ী যেমনটি এখন বিলুপ্তির পথে। তেমনি তার সাথে গাড়ীর চাকা বানানোর কাজটিও বিদায়ের পথে। মানুষের জীবন মানের উন্নতি ঘটলেও এই চাকার মিস্ত্রিরা পেশা হারিয়ে এখন বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছেন।

গ্রামাঞ্চলের সড়ক পথের উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষ ও মালামাল পরিবহনের জন্য যানবাহনের পরিবর্তন হয়েছে। এখন গরু-মহিষের গাড়ীর জায়গায় দ্রুতগতির ইঞ্জিন চালিত(শ্যালো)নছিমন, করিমন, হ্যাড়ো, ট্রাক্টর, হিউম্যান হলার, সিএনজি হালে চার্জেবল ব্যাটারীর যানবাহন গ্রামের সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

একটা সময় ছিলো, যখন গরু-মহিষের গাড়ীই ছিলো গ্রামের মানুষের চলাচল ও পরিবহনের একমাত্র বাহন।আর এসব গাড়ীর চাকার প্রয়োজনে গ্রামে গড়ে উঠেছিলো চাকার কারখানা।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ছিলো এই কারখানা। এখন প্রায় সব কারখানাই বন্ধ। উপজেলার অমৃতকুন্ডা গ্রামের চাকা তৈরীর মিস্ত্রি জয়েন উদ্দিন বলেন, ‘এখনো আমরা কিছু মানুষ টিকে আছি। তার কারন হলো, রাস্তায় যাই চলুক, মাঠের ফসল আনবের লাগলি এখনো গরু-মহিষের গাড়ী লাগবিই। মাঠে কিন্তু আপনের ওই নছিমন-করিমন হ্যারো যাবের পারে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাই এখনো কৃষকগারে এই গাড়ীর উপর নির্ভর করা লাগে। এখনও আমরা অর্ডার পালি চাকা বানায়ে দেই। ইটভাটার অত্যাচারে চাকা বানানোর একমাত্র গাছ বাবলা গাছ শেষ হয়ে গেছে। তাই বেশী দামে কিনা লাগে।’ এখন একজোড়া মহিষের গাড়ির চাকা বানাতে প্রায় ১২/১৫ হাজার টাকা লাগে। গাড়ীর চাকা আর চলতিছে না দাদা। আমাগারে জীবনের চাকাও চালাবের পারতিছিনে। সব থ্যামে যাতিছে। কি কোরবো। বাধ্য হয়ে অন্য পিশাত কাজ করি। গ্যাতির মানুষরা ডাকলি এখন বাবুর্চিগিরিও করি।’

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বলছিলেন বিলুপ্ত প্রায় গাড়ীর চাকা বানানোর কারিগর (মিস্ত্রি) গৌরচন্দ্র বৈরাগী। পাবনার চাটমোহর পৌরসভার নাপিতপাড়ার বাসিন্দা তিনি। আর গাড়ীর চাকার একটি ছোট কারখানা চালান উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচুরিয়া নিচুবাজারে। সেখানেই তিনি এখনো গরু-মহিষের গাড়ীর চাকা তৈরী করেন। তার মতো গ্রাম বাংলার হাজারো চাকার কারিগরদের এখন দুর্দিন।

লেখক: উন্নয়নকর্মী।