লাইফস্টাইল

জেনে নিন মধুর উপকারিতা

  অনলাইন ডেস্ক ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ , ৯:০৯:৫৭

প্রাচীন কাল থেকেই আমরা জেনে আসছি মধুর উপকারিতা। আপনি কি জানেন মধু খেলে কি কি উপকার পাবেন? এক চামচ মধু আপনার শরীরের জন্য কি কি রোগ ভাল করতে পারে?

বৈজ্ঞানিদের মতে নিয়মিত মধু খেলে আপনার শরীরের অনেক রোগ ভাল হয়ে যাবে। আজকে আমরা জানবো মধুর উপকারিতা, আপনি কেন মধু খাবেন? কখন খাবেন, মধুর অপকারিত, খাওয়ার সঠিক নিয়ম ইত্যাদি নিয়ে।

মধুতে কি কি উপদান আছে? এবং মধুর উপকারিতাগুলো

মধু আমরা সাধারনত সকলেই খাই। কিন্তু এর উপাদানগুলো জানি না। মধুতে আছে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান যা আপনার শরীরের জন্য খুবই জরুরী। মধুতে থাকে ৩৪-৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ২৫-৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ, ০.৫-৩.০ শতাংশ সুক্রোজ, ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ, ১১ শতাংশ এনকাইম, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬, আয়োডিন, জিংক, কপার, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান সহ আরো অনেক কিছু। আপনি কি ভেবে দেখেছেন মধু আপনার জন্য কতটা জরুরী। চলনু তাহলে জেনে নেই মধুর উপকারিতাগুলো।

মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

মধুতে খাওয়ার ফলে যেমন আছে উপকার তেমনি কিছু অপকারিতাও আছে। সর্ব প্রথম জানবো মধুর উপকারিতাগুলোঃ

১। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ মধুতে কোন চর্বি নেই। তাছাড়া মধু পেট পরিষ্কার, হজমে সহায়তা করে এবং চর্বি কমায়। এর ফলে নিয়মিত মধু খেলে আপনার আপনার ওজন কমতে থাকবে।

২। হজমের সমস্যাঃ মধুর উপাদানগুলি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত মধু খেলে আপনার বদ হজম দূর হবে।

৩। বুদ্ধি বাড়েঃ মধু খেলে আপনার মস্তিকের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যার ফলে আপনার বুদ্ধি বাড়ে। রাতে ঘুমানোর আগে একটু মধু খেলে আপনার বুদ্ধি বাড়তে সাহায্য করবে।

৪। অনিদ্রা ও ঘুমের জন্য সহায়কঃ মধু ঘুমের জন্য খুবই উপকারি। রাতে ঘুমানোর আগে একটু মধু খেলে আপনার অনিদ্রা চলে যাবে এবং আপনার ভাল ঘুম হবে। তাই মধুকে ঘুমের ঔষধও বলা যেতে পারে।

৫। ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ আমাদের সবারই কম বেশি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। যা আপনার ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ১ চামচ মধু ভোর বেলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া দূর হবে।

৬। যৌন দুর্বলতায়ঃ অনেকেই আছে যারা যৌন দূর্বলতায় ভুগছেন বা দ্রুত বীর্যপাত হয় অথবা যৌন ইচ্ছা কমে যাচ্ছে তারা আজকে থেকে মধু খেতে পারেন। মধুর উপকারিতার মধ্যে এটা খুবই উপকারিত একটি ঔষধ হিসাবে কাজ করে।

৭। অম্বলের সমস্যা সমাধানেঃ খাঁটি মধু ভোল বেলা খেতে পারলে আপনার অম্বলের সমস্যা দূর হবে।

৮। পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ মধু খেলে পাকস্থলী সুস্থ থাকে। কেননা মধুর ফলে আপনার হজম শক্তি বাড়ে যেকারনে মধু খেলে পাকস্থলীর কাজ জোরালো হয়। এর ফলে পাকস্থলীর ভাল কাজ করে এই মধু।

৯। অরুচি ও বমি ভাবঃ অনেকেই আছেন যারা বেশি খেতে পারেন না খাবাবে অরুচি এবং কিছু খেলে বমি বমি আসে। কিছু খেতে ইচ্ছে করে না তারা মধু খেতে পারেন।  আপনার সমস্যা দূর হবে।

১০। হৃদরোগে দূর করতেঃ মধু খেলে আপনার হৃদরোগ ভাল হয়। এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু মিশিয়ে খান। এটা হৃৎপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

১১। রক্ত ও রক্তনালী পরিষ্কারঃ মধু যদি আপনি নিয়মিত খাতে পারেন তাহলে আপনার রক্তনালী পরিষ্কার হবে এবং কোন দূষিত পদার্থ জমা হতে পারবে না। এর ফলে রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে শুধুমাত্র মধু খাওয়ার ফলে।

১২। রক্ত উৎপাদনেঃ রক্ত উৎপাদনে মধু বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মধুতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে।

১৩। কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রেঃ মধু কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

১৪। হাঁপানিঃ আপনি যদি হাঁপানি রোগে ভুগে থাকেন তাহলে আজকে থেকে মধু খাওয়া শুরু করুন। মধু হাঁপানি রোগ কমাতে সাহায্য করে।

১৫। গ্যাসট্রিক ও আলসারেঃ যারা গ্যাসিট্রিক বা আলসার সমস্যায় ভুগছেন তারা মধু খাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ হতে পারেন। মধু গ্যাসট্রিক ও আলসার ভাল করতে সাহায্য করে।

১৬। শরীরের নানান ব্যথায়ঃ আমাদের সকলের শরীরে কম বেশি ব্যথা থাকে। কারে মাজায় ব্যথা, কারো হারে ব্যথা। মধু এই সকল শরীরের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

১৭। পেশিশক্তি বাড়াতে ও দুর্বলতা দূর করতেঃ মধুতে আছে প্রাকৃতিক চিনি যা শরীরের পেশিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং অনেকেই আছে যাদের শরীর দূর্বল বা ঘুম ঘুম ভাব থাকে তারাও মধু খাওয়ার মাধ্যমে দূর্বতলা দূর করতে পারে।

১৮। হাড় ও দাঁতের গঠনে বা দাঁতের যত্নেঃ মধুতে আছে ক্যাসলিয়াম আর আমরা জানি যে ক্যালসিয়াম দাঁতের এবং হাড়ের জন্য খুবই কার্যকারি। ক্যাসলিয়ামের অভাব পূরন করে আবার অনেকের দাতে পাথর জমে তারা মধু খেতে পারেন। দাত এবং হাড়কে সুস্থ ও সবল রাখতেও মধু নিয়মিত খেতে পারেন।

১৯। মুখের ঘা রোধ করেঃ অনেকের মুখে ঘা হয়। তারা মধুর জলে কুলি করতে পারেন এর ফলে উপকার পাবেন। তাছাড়া মধুতে আছে ভিটামিন যা ঘা রোধে ভূমিকা রাখে।

২০। দৃষ্টি শক্তি বাড়াতেঃ অনেকের দৃষ্টি শক্তি অনেক কম এবং অনেকে চসমা ব্যবহার করে। দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে আপনি নিয়মিত মধু খেতে পারেন।

২১। সর্দি কাশি কমাতেঃ সর্দি বা কাশি আমাদের নিয়মিত একটি সমস্যা। আপনার সর্দি কাশি কমাতে এবং সুস্থ থাকতে নিয়মিত মধু খাওয়া উচিত। শিশুদের জন্য এটি খুবই উপকারি।

২২। শরীরে তাপমাত্রা বাড়াতেঃ অনেকের অনেক সময় শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে নিয়মিত মধু সেবন করুন এতে উপকার পারেন।

২৩। আর্দ্রতা বজায় রাখাঃ শরীরের আদ্রতা ধরে রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিসীম।

২৪। ড্রেসিং করতেঃ ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করতেও মধু ব্যবহার করতে পারেন।

২৫। তারুণ্য ধরে রাখতে, রূপচর্চায় বা চুলের যত্নেঃ মধু আপনার তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে। আবার রূপচর্চা বা চুলের যত্নেও বিশেষ কাজ করে। পাশাপাশি সৌন্দয্য বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

২৬। পানিশূন্যতায়ঃ পানি শূন্যতা দেখা দিলে মধু খেতে পারেন।

২৭। উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ  মধু উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং যৌন সমস্যার সমাধানে কাজ করে।

২৮। রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়ঃ মধুতে আছে অনেক গুনাগুন এবং উপকারিতা। আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ হয় এবং সেই রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে আপনি নিয়মিত মধু খেতে পারেন। সুস্থ জীবন এবং সুস্থ থাকতে আপনার নিয়মিত মধু খাওয়া উচিত। ব্যাকতেরিয়ার আক্রমত থেকে রক্ষা করে এই মধু।

এছাড়াও মধুর আছে নানা গুনাগুন যেমন, গলার স্বর যন্ত্রের জন্য, বার্ধক্য অনেক দেরিতে আসে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, শরীর ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে, জিহ্বার জড়তা দূর করে, মধু মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, বাতের ব্যথা উপশম করে, মাথা ব্যথা দূর করে, ওজন বৃদ্ধি করে, ব্যায়ামকারীদের শক্তি বাড়ায় ইত্যাদি। তাই নিয়মিত সুস্থ রাখতে মধু খান। মধুকে প্রাকৃতিক ঔষধ ও বলা হয়।

জেনে নিন মধুর অপকারিতা

মধুর উপকারিতা বলতে গেলে শেষ হবে না। প্রতিটি জিনিসের যেমন আছে কিছু উপকারিতা তেমনি আছে কিছু অপকারিতা। মধু উপকারিতার পরিমান বেশি। আপনি যদি নিয়ম মেনে মধু খান তাহলে উপকার পারেন।

তবে অনেক সময় দেখা যায় মধু খাওয়ার ফলে অনেকের অনেক সমস্যা দেখা দিয়ে। মধুর বেশি খেলে বমি বমি ভাব হতে পারে, অতিরিক্ত গরম লাগতে পারে, শরীরে জ্বালা পোড়া অনুভব হতে পারে ইত্যাদি। আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে মধুর উপকারিতা অনেক কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না। অনেকে আছে যারা না জেনে মধু খায় যার ফলে তাদের উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমান বেশি  হয়।

আপনি নি জানেন মধু খাওয়ার নিয়ম? কখন খাবেন মধু? কিভাবে খাবেন?

চলুন এখন জেনে নেই মধু খাওয়ার নিয়ম

আমরা সকলেই জানি মধু আমাদের শরীরে জন্য উপকারি। তাই অনেকেই আছেন যারা নিজের মত করে মধু খেয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিটি জিনিসেরেই একটি নিয়ম আছে। আপনি বিভিন্ন সময় মধু থেকে পারেন। তবে মধু খাওয়ার সবচেয়ে সঠিক সময় হলো প্রতিদিন সকালে এবং রাতে। আপনি প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ১ বা ২ চামচ মধু থেকে পারেন। সরাসরি খেতে পারেন অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে  বা খালি পেটে বা হালকা গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এক বছরের কম বয়সী শিশুকে মধু খাওয়াবেন না।

এছাড়া মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতিহলোঃ

  • মধু খাওয়ার সবচেয়ে ভাল এবং সঠিক সময় হলো সকালে এবং রাতে
  • রাতে ঘুমানেরা আগে মধু খেতে পারেন
  • সকালে খালি পেটে মধু খেতে পারেন
  • দারচিনির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন
  • লেবুর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন
  • আদার সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন
  • কালোজিরার সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন
  • কচি বেলের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন
  • তুলসি পাতার সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন
  • রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতাঃ

    রাতে মধু খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে। অনেকে অনেক কারনে রাতে মধু খেয়ে থাকে। তবে বিশেষ যে উপকারিতা তা হলোঃ

    • রাতে মধু খেলে গভীর ঘুম হয়
    • যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়
    • যারা অনিদ্রায় ভুগছে তাদের জন্য খুবই উপকারি
    • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
    • দেহে শক্তি বৃদ্ধি করে

    সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতাঃ

    রাতে যেমন মধু খাওয়ার উপকারিতা আছে তেমনি সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা আছে। অনেক ডাক্তার এবং বিজ্ঞানিরা সকালে মধু খাওয়ার জন্য বলে থাকে। সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা হলোঃ

    • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
    • যৌন শক্তি বাড়ায়
    • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
    • প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে
    • শরীরকে ঝরঝরা এবং সতেজ রাখে সারা দিন (সূত্র : কলকাতা হারবাল)