অনলাইন ডেস্ক 13 May 2023 , 9:53:56
পাবনার আমিনপুরে এইচডিসি (হেল্প ডেভেলপ কর্পোরেশন) নামের একটি ভুয়া কোম্পানি খুলে গ্রামের সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শতাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা।
শুক্রবার (১৩ই মে) দুপুরে প্রতারক চক্র দলের মুল হোতাসহ মোট নয়জনকে আটক দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
বাড়ীর মালিক এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের আট তারিখে তারা পন্য বিক্রয় অফিসের কথা বলে বাসা ভাড়া নেয় এবং মার্চ মাসের ২৬ তারিখে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। অফিস শুরুর পর থেকেই তারা প্রথম কাজ করেন ফেসবুকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এলাকার বেকার ছেলেদের নিয়োগ দেন মুল প্রতারক হারুনুর রশিদ বাদশা। তিনি এই প্রতারণার কোম্পানির বিনিয়োগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রতারক চক্রের মুল হোতা কোম্পানিটির বিনিয়োগ কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বাদশা (৩০) সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা থানার হাটিপাড়া গ্রামের মোঃসাইদুল ইসলামের ছেলে।
হারুনুর রশিদ বাদশা জানান, তাদের কাজ মুলত ব্যবসায়ীদের ব্যবসার মুলধনে বিনিয়োগ করে সহযোগিতা করা। কোন গ্রাহক যদি ১লক্ষ টাকা অফিসে জমা দিতেন তাদেরকে ব্যবসা করার জন্য ২ লক্ষ টাকা মাসে ১ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেয়ার শর্তে লোন দিতেন।
এইচডিসি কোম্পানির ম্যানেজার মোঃ সাইফুল ইসলাম (৪২) সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার গঙ্গাপ্রসান গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে।
এইচ ডিসির ম্যানেজার সাইফুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এখানকার কেউ না আমার কাজ সারাদিন বসে থাকা। তবে ভুক্তভোগী গ্রাহক এবং প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ অফিসার জানান, তিনিই এই এইচ ডিসির ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। এইচ ডিসির ম্যানেজারের শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি লেখাপড়া করেছেন বলে জানান।
প্রতিষ্ঠানটির ভুক্তভোগী গ্রাহক আমিনপুর বাগ মির্জাপুর গ্রামের ছুরমান আলী (৬৫) জানান, আমার একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে গত ১০ দিন যাবৎ প্রতিদিন আমার কাছে যেতেন তারা।সে সময় আমাকে বিভিন্ন প্রকার আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে সদস্য বানিয়ে আমার কাছ থেকে নগদ ৬ লক্ষ টাকা নিয়ে আসেন আর বলেন আগামী ৭ দিনের মধ্যে আপনার ব্যবসার মালামাল কেনার জন্য ৬ লক্ষ টাকা দেয়া হবে। এখন দেখছি এরা সবাই প্রতারক আমি প্রতারকের ক্ষপ্পরে নিঃস্ব হয়ে গেছি।
এইচ ডিসি কোম্পানিটির আরেক সদস্য কাশিনাথপুর, টাংবাড়ী গ্রামের আবু সামা জানান, লাখে এক লাখ এই প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে নগদ এক লক্ষ টাকা নিয়েছে। কিন্তু ১০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমার ২ লক্ষ টাকা আর দিচ্ছে না। আজ জানতে পারি এদের সকল কার্যক্রম ভুয়া, এরা একটা প্রতারক চক্র।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহঃপতিবার দুপুর ৩ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এইচ ডিসির অফিস ঘেরাও করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে ঘটনাস্থলে আমিনপুর থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির সকল তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির কোন বৈধ কাগজ পত্র দেখাতে না পারায় চক্রের ৩ মুল হোতাসহ ৯ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সে সময় অফিস তল্লাশি করে শপিং ব্যাগে থাকা নগদ ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ১০০ শত টাকা এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া সাদা ব্যাংক চেক সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নথিপত্র জব্দ করে পুলিশ।
এ বিষয়ে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান জানান, “আমাদের কাছে খবর আসে আমিনপুর ফুটবল মাঠ সংলগ্ন একটি দোতলা বাসায় এনজিও প্রতিনিধিদের গৃহবন্দি করে রেখেছে কিছু মানুষ। তাৎক্ষনিক আমি ও আমার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সহ অফিসারদের ঘটনা স্থানে যেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি। পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে তারা একটা প্রতারক চক্র। আমরা ইতোমধ্যে অফিস বাড়ির মালিকের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি এবং এইচ ডিসির কর্মরত ৯ জনকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছি।”