স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনায় তিনবার এসেছিলেন । প্রথমবার আসেন ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী। সেবার ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে সরাসরি নগরবাড়ী এসে নামেন। সেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মুজিব বাঁধ উদ্বোধন করেন। এরপর সংক্ষিপ্ত জনসমাবেশে বক্তব্য দিয়ে ঢাকায় ফিরে যান।
বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয়বার পাবনায় আসেন ঐ একই বছরের ১০ মে। সেবার দুইদিনের জন্য পাবনা সফর করেন। ১০ মে সকালে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে পাবনা আসেন এবং স্থানীয় শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন। সন্ধ্যায় বনমালী ইন্সটিটিউটে নাগরিক সংবর্ধনা শেষে পাবনা সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করেন। পরেরদিন ১১ মে সকালে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন।
বঙ্গবন্ধু তৃতীয়বার পাবনায় আসেন ১৯৭৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী। সেদিন পাবনায় এসেছিলেন এক হৃদয় বিদারক ঘটনায়। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাবনা সদর আসনের প্রার্থী আব্দুর রব বগা মিয়া মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধু নাটোর উত্তরা গনভবনে অবস্থান করছিলেন। দুর্ঘটনার কথা জানার পর বঙ্গবন্ধু সড়ক পথে পাবনায় আসেন। অনির্ধারিত এই সফরে এসে বঙ্গবন্ধু কয়েক ঘন্টা পাবনা শহরে অবস্থান করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনকালে নিজ জেলা গোপালগঞ্জের ( ফরিদপুর) পর সবচেয়ে বেশিবার তিনি পাবনায় এসেছেন । তাঁর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে জানা যায় ১৯৫৩ সালে পাবনায় এসে আওয়ামী লীগের প্রথম জেলা কমিটি গঠন করেছিলেন। উক্ত কমিটিতে ক্যাপ্টেন এম, মনসুর আলী সভাপতি এবং আব্দুর রব বগা মিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে অন্ততঃ ১৫ বার তিনি পাবনা সফর করেন। মতান্তরে অনেক লেখক ও গবেষক আরো অধিকবার বঙ্গবন্ধুর পাবনা জেলা সফর করার তথ্য প্রকাশ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর এত বেশিবার পাবনায় সফর করার বিষয়ে নানা চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু পাবনাকে নিজের জেলার মত মনে করতেন। এই পাবনায় তাঁর একমাত্র ছোট ভাই শেখ নাসের এর শ্বশুর বাড়ি। এই পাবনায় তাঁর অসংখ্য বন্ধু এবং সহপাঠী ছিলেন। যাদের সাথে কলকাতায় পরিচয় হয়েছিল। এদের অনেকে বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনৈতিকভাবে যুক্ত হয়েছিলেন। পাবনায় রাজনীতির বাইরে অনেকের সাথে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠতা ছিল । স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস ছিল ঢাকার পুরানা পল্টনের ৫১/এ নম্বর বাড়িতে । যে বাড়ির মালিক ছিলেন পাবনার হোসিয়ারী ও বিড়ি ব্যবসায়ী হোসেন আলী খাঁ’র ভাই আফসার আলী খাঁ। সে সুবাদে উক্ত পরিবারের সাথে বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে পাবনায় এসেছেন। কখনো এসেছেন সাংগঠনিক সফরে। কখনো এসেছেন ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে। এরমধ্যে দুইবার আসতে হয়েছে শোক বিহ্বল ভগ্ন হৃদয় নিয়ে। একবার ১৯৭০ সালে ২৫ ডিসেম্বর আসেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আহমেদ রফিক হত্যাকান্ডের পর। আর শেষবার আসেন ১৯৭৩ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারী সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুর রব বগা মিয়া মৃত্যুবরণ করার পর। বঙ্গবন্ধু এই দুইবার স্বজন হারানোর বেদনায় শিশুর মত অশ্রুবিসর্জন দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী, তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সাথে পাবনা সফর করেছেন। এরমধ্যে দুটি সফর উল্লেখযোগ্য। একটি ১৯৬৬ সালের ৭ এপ্রিল পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠের জনসভা। সেদিন তিনি প্রথম প্রকাশ্যে ৬ দফা ঘোষণা করেছিলেন। এরপর তিনি গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় তিন বছর একটানা জেলে বন্দী ছিলেন। আর পাবনায় দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য সফরটি ছিল ১৯৭২ সালের ১০ মে।
১৯৭২ সালের ১০ মে স্বাধীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনা সফরে আসেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমান বাহিনীর জলপাই রং এর বৃহৎ হেলিকপ্টারটি পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামের দক্ষিণ অংশে অবতরণ করেন। মাঠে হাজার হাজার জনতা । জয় বাংলা আর জয় বঙ্গবন্ধু বলে জনতার গগনবিদারী শ্লোগানে হেলিকপ্টারের বিকট আওয়াজ যেন ছাপিয়ে পড়ে। কোথাও নিরাপত্তা বাহিনী নাই। সুশৃঙ্খল জনতাই যেন বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা রক্ষী। হেলিকপ্টার অবতরণ আর বিকট শব্দ নিয়ন্ত্রণ করার পর হেলিকপ্টারের দরজা উন্মুক্ত হলে বঙ্গবন্ধু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন আর বীর জনতাকে হাত তুলে সালাম জানাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর হাত তুলে সালাম জানানো এবং সেই হাত নিজের মাথায় বুলিয়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধু যেন জানান দিচ্ছেন বাঙালী জাতির প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নাই।
বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারের সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসেন। তাঁর পিছনে সফরসঙ্গী মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ, প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ এবং প্রমুখ। অভ্যার্থনা জানানোর জন্য সিড়ির গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন পাবনার জেলা প্রশাসক আকবর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব বগা মিয়া এমসিএ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজি উদ্দিন খান, জেলা মুক্তিবাহিনীর অন্যতম প্রধান রফিকুল ইসলাম বকুল, বেবী ইসলাম, ফজলুল হক মন্টু এবং আরো অনেকে। নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে ফুল দিয়ে বরণ করার পর পাবনার এসপি পঙ্কজ কুমার মিত্রের নেতৃত্বে চৌকস পুলিশ বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এরপর সারিবদ্ধ জনতার কাতারে বঙ্গবন্ধু। সবার সাথে হাত মেলাচ্ছেন, কথা বলছেন এবং কাউকে কাউকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরছেন। বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা থেকে কেউ বাদ পড়ছে না।
সেদিনের ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে একটি সুখকর স্মৃতি লেখক হিসেবে পাঠককে শেয়ার করতে চাই। সেদিন আমি বঙ্গবন্ধুকে নিজের হাতে বানানো মালা পরিয়ে দেবার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছিলাম। তাঁর সাথে হাত মেলানো, কথা বলার সুযোগ এবং নিজের লেখা মানপত্র দিতে পেরেছিলাম। সেদিন দর্শক হিসেবে কাছে থেকে দেখা সেই কথাগুলো আজ স্মৃতিচারণ করে পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমি তখন পাবনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইছামতি পত্রিকার সম্পাদক। প্রকাশক হলেন পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জিএস আব্দুল হাই তপন। আওয়ামী লীগ অফিস থেকে প্রকাশিত পত্রিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রফিকুল ইসলাম বকুল এবং ফজলুল হক মন্টু। বঙ্গবন্ধুর পাবনা আগমনের প্রচার প্রচারণা থেকে শুরু করে অনেক বিষয়ে কাছে থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম।
এই লেখার সাথে সংযুক্ত ছবিতে আমি বঙ্গবন্ধুকে নিজের হাতে বানানো মালা পরিয়ে দিচ্ছি। তখন বাজারে রঙ্গিন কাগজের মালা ব্যতিত হাতে বানানো মালার প্রচলন কম ছিল। আগের দিন বাঁশের বাতায় ফ্রেম বানিয়ে ঝাউগাছের পাতা এবং দেবদারু গাছের পাতা দিয়ে মালা বানিয়েছিলাম। ঐ সময়ে ফুল না পেয়ে পাতাবাহার গাছের কয়েকটি পাতা দিয়েছিলাম। এছাড়া কয়েক দিনের চেষ্টায় নিজ হাতে লেখা একটি মানপত্র বাঁধাই করেছিলাম। সেদিন স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুকে মালা পরিয়ে দেই এবং সন্ধ্যার পর বনমালীতে মানপত্র দিয়েছিলাম।
পাবনা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুকে মালা পরিয়ে দেবার সময় আব্দুল হাই তপন, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বিশ্বাস, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, আল মাহমুদ নিটু সহ একসাথে দাড়িয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমার সামনে আসলে তাঁকে মালা পরিয়ে দেবার সময় বললাম বঙ্গবন্ধু আমি রাঙা। বগা চাচার বাড়িতে ( ১৯৭০ সাল ) আপনাকে কবিতা শুনিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু থমকে দাঁড়ালেন এবং আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বঙ্গবন্ধুকে বললাম আমি পাবনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইছামতি পত্রিকার সম্পাদক। বঙ্গবন্ধুকে বেশ কয়েকটি পত্রিকা দেওয়া হয়। উনি পত্রিকা এবং মালা তাঁর সাথে থাকা কারো হাতে দিলেন।
সেদিন বঙ্গবন্ধু পাবনা স্টেডিয়ামে থাকা প্রায় সবার সাথে হাত মিলিয়ে পাবনা সার্কিট হাউসে চলে যান। ঐদিন বঙ্গবন্ধুকে মালা দেবার পর বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদের সাথে ঘুরলাম। বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টার থেকে নামার পর তোফায়েল আহমেদ যতক্ষণ স্টেডিয়ামে ছিলেন ততক্ষণ তাঁর সাথে ছিলেন রফিকুল ইসলাম বকুল, বেবী ইসলাম এবং ফজলুল হক মন্টু। সেদিনের আরেকটি স্মৃতি মনে পড়ে। স্টেডিয়ামের উত্তর পাশে মহিলা আওয়ামী লীগের সেচ্ছাসেবকরা সুসজ্জিতভাবে গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন। ঐ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন রফিকুল ইসলাম বকুলের খালা ( জহুরুল ইসলাম বিশু’র আম্মা)। ঐ সময় পরিদর্শনকালে জনৈক ফটোগ্রাফার ছবি তোলার সময় তোফায়েল আহমেদ তাকে জিজ্ঞাসা করেন তোমার ক্যামেরায় ফিল্ম কি আছে? নাকি এমনি সাটার টিপে যাচ্ছো। এই কথায় ক্যামেরাম্যান সহ সবাই উচ্চস্বরে হাসাহাসি করেছিলেন। উল্লেখ্য তখন ক্যামেরার ফিল্ম ছিল খুব দুষ্প্রাপ্য এবং ব্যয়বহুল। পাবনা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বঙ্গবন্ধু সার্কিট হাউসে যান।
সেখানেও প্রচুর মানুষ। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, শীর্ষ পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের ভীড়। বঙ্গবন্ধু এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে ঘিরে আছেন পাবনার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। বিশেষ করে আব্দুর রব বগা মিয়া এমসিএ, ওয়াজি উদ্দিন খান, গোলাম আলী কাদেরী, আবু তালেব খোন্দকার, এ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন, আফজাল হোসেন খোকা, অধ্যক্ষ আব্দুল গণি, দেওয়ান মাহাবুবুল হক ফেরু, নবাব আলী মোল্লা, আলতাফ হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সাথে যুব নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে মোঃ নাসিম, আব্দুস সাত্তার লালু, রেজাউল করিম, রফিকুল ইসলাম বকুল, বেবী ইসলাম, সাহাবুদ্দিন চুপপু, ফজলুল হক মন্টু প্রমুখ নেতাদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত।
ঐদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুকে পাবনা বনমালী ইন্সটিটিউটে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মাল্যদান ও মানপত্র দেওয়া হয়। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রব বগা মিয়া, জেলা প্রশাসক আকবর হোসেন এবং প্রমুখ। বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যের শেষে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ সময় ধরে আবেগঘন বক্তৃতা করেছিলেন। বক্তব্যের শুরুতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমজাদ হোসেনের মৃত্যু, শহীদ এডভোকেট আমিন উদ্দিনকে পাকিস্তানি সৈন্যরা নির্মমভাবে হত্যা করা, শহীদ আহমেদ রফিককে হত্যা করা, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা, ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানির কথা, লক্ষ লক্ষ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভার্ট ধ্বংস করার কথা বলতে গিয়ে বার বার অশ্রুশিক্ত হয়ে পড়ছিলেন। কেমন করে দেশের মানুষকে খাদ্য দিবেন, বাসস্থান দিবেন, বস্ত্র দিবেন এমন কথা বলতে গিয়ে বার বার বিচলিত হয়ে পড়ছিলেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেছিলেন আমি তিন বছর তোমাদের কিছুই দিতে পারবো না। এই বলে বক্তৃতা শেষ করেছিলেন, রিক্ত আমি নিঃশ্ব আমি, দেবার কিছু নাই – আছে শুধু ভালবাসা দিয়ে গেলাম তাই।
সেদিন নাগরিক সংবর্ধনায় সবচেয়ে আকর্ষনীয় পর্ব ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পাবনার স্থানীয় শিল্পীদের গান শুনে বঙ্গবন্ধু খুব খুশি হয়েছিলেন। বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক হিরো’র লেখা ও তাঁর গাওয়া ” হে প্রিয় জননী – বঙ্গ নামধারিনী – তোমার মুখে ফোটাতে হাসি, রক্ত দিয়েছে কত বঙ্গবাসী ” এবং আনোয়ার হোসেন বগা’র গাওয়া ” মুজিব বাইয়া যাও রে – নির্যাতিত দেশের মাঝে – জনগনের নাও ওরে মুজিব বাইয়া যাওরে “। এই দুটি গান শুনে বঙ্গবন্ধু তাদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এবং তাদের পুরস্কৃত করেছিলেন। ঐদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শহীদ সাধনের ভাই শাহনেওয়াজ খান স্বপন, আনন্দ বসাক, রবীন্দ্রনাথ সরকার, ওস্তাদ দেলোয়ার হোসেন, মনোয়ারা বেগম ( ডলি সায়ন্তনীর মা) প্রমুখ শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেছিলেন।
রাতে বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংবর্ধনা শেষে সার্কিট হাউসে যান। সেখানে রাত্রি যাপন করে পরেরদিন সকাল ১১ টার দিকে শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন।
( সমাপ্ত)
আমিরুল ইসলাম রাঙা
রাধানগর মজুমদার পাড়া
পাবনা।
১৪ আগষ্ট ২০২৩