পাবনায় এমটিএফই’র প্রতারণায় নি:স্ব হাজারো মানুষ
মাসুদ রানা, আটঘরিয়া (পাবনা) :
19 August 2023 , 11:59:14
সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে বিদেশি অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এমটিএফই) নামের একটি অনলাইন ট্রেডিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এতে করে সারাদেশের মতো পাবনা জেলা থেকেও কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী নি:স্ব হয়ে পড়েছেন।
অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে গতকাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে এমটিএফই নামক ওই প্রতিষ্ঠান। দুবাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করতো।
ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের নামে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বা ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে বন্ধ হয়েছে এমটিএফই। এই ১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের বলে অভিমত সাইবার বিশ্লেষকদের।
এমটিএফই ব্যবসায় প্রতারিত হয়েছেন এমন অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘এমটিএফই’ একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। যাতে অনেক লোভনীয় অফার দিয়ে মানুষকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হতো।
লোভনীয় অফারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো, ৬৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতি মাসে ২৪ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। তাছাড়া আরও যত মানুষকে রেফারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করাবেন এর উপরও মোটা অংকের কমিশনের লোভ দেখানো হতো।
কিন্তু কিছু দিন টাকা বিনিয়োগ করার পর টাকা তুলার সময় এলে দেখা যেত সফটওয়্যার আপডেট চলছে, সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে, ট্রানজেকশন করা যাচ্ছে না ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিত। গতকাল দেখা যায় অটো ট্রেড নামক একটি অপশনের কারণে পুরো ব্যালেন্স মাইনাস হয়ে গেছে।
পাবনা জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিলো এই এমটিএফই নামের অনলাইন ট্রেডিং। অনেকে অতিলোভে পড়ে ধার-দেনা করে, কেউ কেউ আবার জমি বা গরু ছাগল বিক্রি করে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুতে এই অ্যাপের সঙ্গে পরিচিত হই। প্রথমে কিছু টাকা লাভ হয়েছিল। তখন আমরা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করতাম। টিম লিডার পরামর্শ দেন অটো ট্রেড করার জন্য।
এ পদ্ধতিতে ট্রেড করে কয়েকদিনের মধ্যেই আমার ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়। আমি মনে করছি, এটা তাদের একটি পরিকল্পিত ফাঁদ ছিল। আমার প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এখন পরিবারের চাপে আছি। টাকার কোনো হিসাব দিতে পারছি না।’
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘টিম লিডারদের কথা শুনে বিনিয়োগ করেছিলাম। ৬৫ হাজার টাকা ইনভেস্ট করার পর রাতারাতি ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়। অ্যাপের সঙ্গে জড়িত প্রতারকচক্রকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি তে লেনদেন অবৈধ এবং নিষিদ্ধ।