মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল বরাত আজ রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি)। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এদিন দিবাগত রাতে সারা দেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। ১৪৪৫ হিজরী বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিকে মুসলমানরা মহিমান্বিত রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন।
পবিত্র শবে বরাত মাহে রমজানেরও আগমনী বার্তা দেয়। গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তির মহিমান্বিত এক রজনী পবিত্র শবেবরাত। এই রাতকে ভাগ্য নির্ধারণের রাতও বলা হয় । তদ্রূপ মুক্তির রজনী নামেও পরিচিত এই রাত। এইসব কারণে এ রাতের গুরুত্ব তাৎপর্য ও ফজিলত অন্যান্য সাধারণ রাতের তুলনায় অনেক বেশি।
এই রাতে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি, ঘুরাফিরা, আতসবাজি, পটকা ফুটানো, হালুয়া রুটি বানানোসহ অন্যান্য দুনিয়াবী কাজ ব্যস্ত না থেকে যথা সম্ভব আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতে, জিকির আজকার, তওবা ইস্তিগফার, দলবদ্ধ না হয়ে একাকী কবর জিয়ারত, নফল নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব রাত যাপন করা সওয়াবের কাজ। আর শবেবরাত পরবর্তী দিনে রোজা রাখা অনেক বড় নেক আমল। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত উপস্থিত হয় তখন তোমরা এ রাত (ইবাদতের মধ্যে) জাগরন কর এবং দিনে রোজা রাখো (আল হাদিস)। অন্যত্র নবীজি সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বলতে থাকেন গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়ার কে আছ ? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। অসুস্থতার থেকে সুস্থ চাওয়ার কে আছ আমি তাকে সুস্থ করে দিব। রিযিক অন্বেষণকারী কে আছ? আমি তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিব। কে আছ তওবাকারী ? আমি তার তওবা কবুল করে নিব। (আল হাদিস)।
এই রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকবেন। অনেকে রোজা রাখেন, দান-খয়রাত করেন। অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা ও বিভিন্ন মহামারি থেকে মুক্তির জন্য মুসলমানরা মোনাজাতে অংশ নেবেন। এছাড়া অনেকেই এ রাতে মা-বাবাসহ আত্মীয়দের কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুটি থাকবে।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে আসন্ন পবিত্র রমজানে সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আর কিছু দিন পরই আসছে পবিত্র রমজান মাস। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। এ প্রেক্ষিতে সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে আমি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। পরম করুণাময় সকল সংঘাত-সংকট থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করুন।’
রাষ্ট্রপতি পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মহিমান্বিত ও বরকতময় এক রজনী উল্লেখ করে এ উপলক্ষে দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন।ৎ
অপর এক পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র শবে বরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র শবে বরাত রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তার অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
প্রধানমন্ত্রী পবিত্র এই রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।
শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাতসহ অনুষ্ঠানমালা। বাদ মাগরিব পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে ওয়াজ করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমীন। রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের শিক্ষা ও করণীয় সম্পর্কে ওয়াজ করবেন। ভোর সাড়ে ৫টায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মো. মিজানুর রহমান।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।