• Uncategorized

    দেশে নিরাপদ পানির টেকসই সহজলভ্যতা নিশ্চিতে বিভিন্ন উদ্যোগ

      সবুজ আলো ডেস্ক 27 August 2023 , 6:49:55

    পৃথিবীজুড়ে পানির অনিরাপত্তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় পানির অভাব এবং সরবরাহের চেয়ে বেশি নিরাপদ, ব্যবহারযোগ্য পানির চাহিদার মাধ্যমে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই দ্য কোকা-কোলা কোম্পানির কাছে পানি সংক্রান্ত উদ্যোগগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।

    কোম্পানিটির জনকল্যাণকর অংশ দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন (টিসিসিএফ) জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ খাবার পানির টেকসই সরবরাহ সহজলভ্য করতে এবং স্বাস্থ্যকর বাস্তুতন্ত্র ও জলাশয়ের উন্নয়নে সাহায্য করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থাকে অর্থ প্রদান করে। বর্তমানে টিসিসিএফ বাংলাদেশে ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্সেস গ্রুপ, ওয়াটারএইড এবং ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ফর দ্য আরবান পুওর (ডব্লিউএসইউপি)-এর মতো সংগঠনের সাথে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে কাজ করছে। এসব পার্টনারশিপ বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৬, ১২, ১৪ ও ১৭ নম্বর লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করছে।

    ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ২০৩০ ডব্লিউআরজি-র সাথে মিলিতভাবে ‘ইন্ট্রোডিউসিং ওয়াটার এফিশিয়েন্ট টেকনোলজিস (আইডব্লিউইটি)’ চালু করে টিসিসিএফ। এই প্রকল্পে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আইডব্লিউইটি ৮৫ হাজারের বেশি সুবিধাভোগীর জন্য পানি ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা সৃষ্টি করেছে, ১০০০ একরের বেশি ধানক্ষেতে অল্টারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইয়িং (এডব্লিউডি)-র মতো পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি গ্রহণে সহায়তা করেছে এবং কৃষকদের আর্থিক ও পরামর্শমূলক সহায়তা দিয়েছে। সব মিলিয়ে, প্রকল্পটি সাধারণ ধানের ক্ষেতকে সবজি ক্ষেত ও আমের বাগানে রূপান্তরিত করে লক্ষ লক্ষ গ্যালন পানি সরবরাহে অবদান রেখেছে। এ ছাড়া, একটি টেকসই মডেলের ফলাফল হিসেবে এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত গ্রামীণ আম চাষিদের আয় ১৫০-২০০% বেড়েছে। এই যৌথ উদ্যোগের ৫ম বছরে প্রকল্পটি দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এই পর্যায়ের লক্ষ্য হলো আরও ১৫ হাজার কৃষককে সহায়তা করা।

    ২০১৭ সাল থেকে টিসিসিএফ ওয়াশ বা ডব্লিউএএসএইচ সংক্রান্ত উদ্যোগের জন্য ওয়াটারএইড-এর সাথে মিলিতভাবে কাজ করা শুরু করে। এর লক্ষ্য ছিল জলবায়ু-সহনশীল স্যানিটেশন সুবিধা তৈরি করা, স্কুল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে হাইজিন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা এবং গ্রাউন্ডওয়াটার রিচার্জ সিস্টেম ও রিভার্স অসমোসিস প্ল্যান্টের মতো পানি সংক্রান্ত প্রযুক্তি স্থাপন করার মাধ্যমে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী খাবার পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৭টি স্কুলের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এবং ৪০০-র বেশি পরিবার হাত ধোয়ার সুবিধা পেয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটি জনগোষ্ঠীর ৫৩ হাজারের বেশি মানুষের জন্য স্যানিটেশন সুবিধা উন্নত করেছে। ২০২২ সালে ‘প্রোমোটিং ওয়াটার রিপ্লেনিশমেন্ট অ্যান্ড ওয়াশ সার্ভিসেস’ শিরোনামের একটি প্রকল্পে কাজ করার জন্য টিসিসিএফ ও ওয়াটারএইড আবারও যুক্ত হয়। সাভার ও সুনামগঞ্জ এলাকায় পানি ও স্যানিটেশন নিরাপত্তার প্রচার করা এই প্রকল্পের লক্ষ্য। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ হাজার জনের বেশি মানুষ উপকৃত হবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

    ২০২৩ সালে উন্নত অবকাঠামো ও সেবার মাধ্যমে পরিষ্কার, নিরাপদ পানির সরবরাহ বৃদ্ধি এবং জনগোষ্ঠীতে পানি ব্যবহার সম্পর্কিত আচরণ উন্নত করার উদ্দেশ্যে ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ফর দ্য আরবান পুওর (ডব্লিউএসইউপি)-কে অর্থ প্রদান করে টিসিসিএফ। এই উদ্যোগ চট্টগ্রামের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ৪০,০০০জন মানুষের জন্য পানির স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করবে।

    বিশ্ব পানি সপ্তাহ ২০২৩-এর বৈশ্বিক থিম “সিডস অফ চেইঞ্জ: ইনোভেটিভ সলিউশনস ফর আ ওয়াটার-ওয়াইজ ওয়ার্ল্ড”-এর সাথে মিল রেখে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন এবং পার্টনাররা (ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, ডব্লিউএসইউপি এবং ২০৩০ডব্লিউআরজি) সাভার, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

    ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্সেস গ্রুপ (২০৩০ডব্লিউআরজি) রাজশাহীতে “জয়েনিং ফোর্সেস ফর ক্যাটালাইজিং ট্রান্সফরমেশন ইন বারিন্দ হটস্পট” শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করে। সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন খাতের সহযোগিতার অধীনে বাস্তবায়িত নানা উদ্যোগ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ অগ্রগতির পরিকল্পনা প্রদর্শন। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল।

    ওয়াটারএইড বাংলাদেশ সাভার সিআরপি-তে “প্রোমোটিং ওয়াটার রিপ্লেনিশমেন্ট অ্যান্ড ওয়াশ সার্ভিসেস” প্রকল্প নিয়ে একটি ডিজাইন প্রচার ও নলেজ শেয়ারিং সেশনের আয়োজন করে। আয়োজনটিতে অংশগ্রহণকারীরা পানি সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, যা এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। পাশাপাশি তারা পানির অভাব মোকাবেলায় তাদের অভিজ্ঞতা, কৌশল ও গবেষণার ফলাফল সবার সাথে শেয়ার করেন। এছাড়াও অংশগ্রহণকারীরা এই সমস্যার উদ্ভাবনী ও জলবায়ু-সহনশীল সমাধান বিষয়ে আলোচনা করেন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তি, ভূগর্ভস্থ পানির রিপ্লেনিশমেন্ট এবং পানির টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্পটি এই সমাধান অর্জন করবে।

    নতুন যৌথ প্রকল্পের অর্জন তুলে ধরার জন্য ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ফর দ্য আরবান পুওর (ডব্লিউএসইউপি) চট্টগ্রামে “কনজার্ভ ওয়াটার কনজার্ভ লাইফ” শিরোনামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ব্যবহারকারীদের কাছে ৬৫টি ওয়াটারপয়েন্ট হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি একটি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালু করা হয়, যার লক্ষ্য নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে গুরুত্বপূর্ণ ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ নীতির প্রচার করা। পানি সংরক্ষণ ও পানির নিরাপদ ব্যবহারে উদ্ভাবনী পদ্ধতি বিষয়ে একটি আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয় যাতে অংশ নেন চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথোরিটি (সিওয়াসা), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, জনগোষ্ঠীর সদস্য এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

    এই যৌথ উদ্যোগগুলো পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পানি নীতিসহ সারা দেশে পানির টেকসই ব্যবহার সংক্রান্ত নীতি প্রচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সরাসরি সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে।

    দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সাদিয়া ম্যাডসবার্গ বলেন, “নিরাপদ পানির টেকসই সহজলভ্যতা দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে পানির সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আমাদের বাস্তবায়নকারী পার্টনারদের কাজে সহায়তা করতে পেরে আমরা খুবই গর্বিত।”