পাবনা

আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফল আটঘরিয়ার আমজাদ হোসেন

  মাসুদ রানা, আটঘরিয়া (পাবনা) : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৮:৫৫:৫৮

ছোটবেলা থেকে আমজাদ হোসেন ছিলেন মাছ চাষে আগ্রহী। কোথাও যদি মাছ শিকারের জন্য বাউত নামতো তাঁর মনের ভিতরে মাছ শিকারের জন্য কল্পনায় ছবি আঁকত। অন্যের মাছ চাষ দেখে নিজে মাছ চাষের জন্য পরিকল্পনা করতেন। এভাবেই আমজাদ হোসেন ধীরে ধীরে একজন সফল মাছ চাষী হয়ে উঠলেন।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের বেরুয়ান গ্রামের আমজাদ হোসেন নিজের ভাগ্য বদলের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে সুষম খাদ্য দিয়ে মাছ চাষ করে বছরে ১০-১২ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেছেন।

তবে তার দেখা দেখি এলাকার অনেকেই মাছ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমজাদ হোসেন ৮ একর জলাশয়ে গতানুগতিক ভাবে মাছ চাষ শুরু করেন। হঠাৎ একদিন আটঘরিয়া উপজেলা মৎস্য অফিসার শরিফুল ইসলাম অল্প পরিসরে মাছ চাষ করতে আমজাদ হোসেনকে উদ্বুদ্ধ করেন।

আমজাদ হোসেন বলেন, বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করে আমি লাভবান হয়েছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে আছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাছ চাষের খামারকে আরও সম্প্রসারণ করা।

তিনি আরও বলেন, এক একর জলশায়ে আমি গতানুগতিক ভাবে মাছ চাষ শুরু করি। হঠাৎ একদিন আটঘরিয়া উপজেলা মৎস্য অফিসার শরিফুল ইসলাম আমার মৎস্য চাষ দেখে আমাকে অল্প পরিসরে মাছ চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।

অল্প জলশায়ে অধিক পরিমান মাছ উৎপাদন করার জন্য তিনি আমাকে উৎসাহিত করেন। আমাকে তার অফিস থেকে একটি এ্যারোটল মেশিন দেন। এই এ্যারোটল মেশিন আমি পুকুরে সেট করি।এই এরোটল মেশিন দ্বারা পুকুরে গ্যাস হবে না, পানির গুনগতমান অক্ষুন্ন থাকে। এতে করে অল্প জলশায়ে অধিক পরিমান মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।

আমজাদ হোসেন বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে সুষম খাদ্য দিয়ে নিরাপদ মাছ চাষ করতে শুরু করলাম। ২০২৩ সালে আমি এক হেক্টর জায়গায় আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে ১০ মেট্রিক টনের অধিক মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি এবং ১০-১২ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।

একই গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন,  আমজাদ হোসেনের মাছ চাষে অবিশ্বাস্য সফলতা পেয়েছেন ৷ এমন দৃশ্য দেখে আমিও মাছ চাষ করছি।
ব্যবসায়ী আউয়াল বলেন, আমজাদ হোসেন পুকুরের মাছ অনেক বড় সাইজের। মাছগুলো এখান থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে আমি বাজারে বিক্রি করি। মাছ সাইজে বড় দেখে দামও ভালো পাই। আমজাদ হোসেন যেমন মাছ চাষে লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি আমরাও তার কাছ থেকে মাছ কিনে নিয়ে লাভে বিক্রি করতে পারছি।

আটঘরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমজাদ হোসেন ২০০০ সালের পর থেকে মাছ চাষ  শুরু করেন। ২০২২ সালে মৎস্য চাষের উপর তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষের পর্দশনী দিয়েছি। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা অফিস  থেকে একটি এরোটল মেশিন দিয়ে পুকুরে বসানোর জন্য। এই মেশিন মাছ চাষের জন্য খুবই উপকারে আসে। পুকুরে গ্যাস হয় না এবং অধিক যত্নে মাছ চাষ করা যায়। পুরো উপজেলায় প্রায় ২ হাজর ৮শ’ ৫০ জন মৎস্য চাষি আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাওরপাড়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের পুকুরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি মাছ চাষ উপযোগী, যেকারণে সেখানে মাছের উৎপাদন ভালো হয়। আমরা চাষিদের মাছ চাষে উৎসাহিত করতে সব ধরনের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।’

আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহারুল ইসলাম বলেন,  ‘জলশায় না বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে মৎস্য চাষিদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।’

যে যেখানে যে জলশায়ে মাছ উৎপাদন করেন না কেন?  তাদের শুধু উৎপাদন বাড়ালে আমিষের যে ঘাটতি আছে সেটা পূরণ হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।