• Warning: Undefined property: WP_Error::$cat_ID in /home/shobujalo/public_html/wp-content/themes/jugantor/single.php on line 70
    Uncategorized

    তাড়াশে স্বামী-স্ত্রী ও মেয়েকে গলাকেটে হত্যা; হত্যাকারী ভাগ্নে রাজীব গ্রেফতার

      সবুজ আলো ডেস্ক 31 January 2024 , 9:43:16

    হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার রাজিব।

    সিরাজগঞ্জের তাড়াশে স্বামী-স্ত্রী ও মেয়েকে গলাকেটে হত্যার আসামি নিহতের ভাগনে রাজীব কুমার ভৌমিককে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত রাজীব কুমার ভৌমিক উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথ ভৌমিকের ছেলে ও নিহত বিকাশ সরকারের আপন ভাগনে।

    হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা হলেন- তাড়াশ পৌর এলাকার শোলাপাড়া মহল্লার মৃত কালিচরণ সরকারের ছোট ছেলে বিকাশ সরকার (৪৫), বিকাশের স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৩৮) ও মেয়ে পারমিতা সরকার তুষি (১৫)। পারমিতা তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

    বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩ টায় সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল এক সংবাদ সম্মলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

    জেলা পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিক নিহত বিকাশ সরকারের বোন প্রমিলা রানীর ছেলে। ভাগ্নে রাজিবের বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হন রাজীব। বিকাশ চন্দ্র সরকার তার ভাগিনা রাজিব কুমার ভৌমিককে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা প্রদান করেন। ব্যবসা চলমান থাকাকালীন হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিক তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দিলেও চলতি বছরে এসে হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিকের কাছে তার মামা নিহত বিকাশ চন্দ্র সরকার অতিরিক্ত ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন। বিকাশ চন্দ্র সরকার গত ২২ জানুয়ারি দাবিকৃত টাকা ৭-৮ দিনের মধ্যে ভাগিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য অনেক চাপ দেয় এবং টাকার জন্য ভাগনে রাজিব ও বোনকে ফোনে অনেক বকাবকি করেন। এতে হত্যাকারী রাজীব টাকা ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকিতে মনঃকষ্ট পাওয়ায় তার মামাসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

    এরই জের ধরে গত ২৭ জানুয়ারি বিকাল পৌনে ৫টার দিকে মামা বিকাশ সরকারকে ফোন করে পাওনা টাকা দিতে বাসায় যাওয়ার কথা জানান। এ সময় নিহত বিকাশ চন্দ্র সরকার তাড়াশের বাইরে থাকায় ভাগিনাকে টাকা নিয়ে বাসায় এসে মামির সাথে সাক্ষাৎ করে বাসাতেই থাকতে বলেন। পরে হত্যাকারী রাজীব কুমার বাসায় মামার অনুপস্থিতির সুযোগে মামি এবং মামাতো বোন তুষিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ সময় ভাগনে রাজীবকে কফি খাওয়ানোর জন্য মামি সন্ধ্যাকালীন পূজা শেষে বাসার নিচে দোকানে গেলে হত্যাকারী প্রথমে ব্যাগে করে আনা লোহার রড দিয়ে তার মামাতো বোন পারমিতা সরকার তুষির মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এর মধ্যে কফি কিনে বাসায় ফিরলে মামী স্বর্ণা সরকারকেও একইভাবে গলাকেটে হত্যা নিশ্চিত করে। তাদেরকে হত্যার কিছুক্ষণের মধ্যে মামা বাসায় ঢুকলে তাকেও রড দিয়ে আঘাত করে এবং গলাকেটে হত্যা করে লাশ টেনে নিয়ে বেডরুমে রাখেন। পরে রুমে তালা দিয়ে ঘাতক রাজিব উল্লাপাড়া নিজ বাড়িতে ফিরে যান। যাওয়ার পথে হত্যায় ব্যবহৃত লোহার রড একটি পুকুরে ফেলে যান এবং রক্তমাখা হাসুয়াসহ ব্যাগটি নিজ বাড়িতে নিয়ে যান।

    সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল আরও জানান, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং আসামি গ্রেপ্তারে সিরাজগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. সামিউল আলমের নেতৃত্বে উল্লাপাড়া সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত কুমার সূত্রধর, সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ মো. জুলহাজ উদ্দীন ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে ২০ সদস্যের একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়। পরে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও হত্যায় ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়।

    উপজেলা সদরের বারোয়ারি বটতলা মহল্লার নিজ বাড়িতে বসবাস ছিল বিকাশ এবং তার বড় ভাই প্রকাশ সরকারের। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে নিহত বিকাশ ছিলেন সবার ছোট। শনিবার রাত থেকে বিকাশ এবং তার স্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন স্বজনরা। পরে তারা সোমবার রাতে বাড়িতে গিয়ে দেখেন ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে, তবে মোবাইল ফোন ভিতরে বাজছে। এ সময় পুলিশকে খবর দিলে তাড়াশ থানা পুলিশ রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখতে পায় বিকাশ সরকার, তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার ও মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষির জবাই করা মরদেহ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে নিহতদের আত্মীয় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল গ্রামের সুকোমল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।