Uncategorized

ওয়ানডে ক্রিকেট; শান্তর সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় জয় বাংলাদেশের

  সবুজ আলো ডেস্ক 13 March 2024 , 11:26:41

শান্ত-মুশফিক জুটি অপরাজিত থেকে জয় তুলে মাঠ ছাড়েন

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সফররত শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৫৬ রানের টার্গেটে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৪ ওভার ৪ বলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাট হাতে ১২২ রান করে দলকে বন্দরে পৌঁছে তারপর থামেন। শান্তর বীরোচিত এই অপরাজিত ইনিংস খেলতে ব্যয় হয়েছে ১২৯ বল। ছিলো ১৩টি চার ও ২টি ছক্কার মার।

বুধবার (১৩ মার্চ) জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর তাওহিদ হৃদয়ও চলে যান দ্রুত। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এসে নাজমুল হোসেন শান্তকে কিছুটা সঙ্গ দেন। ৪টি চার ও ১ ছয়ে ৩৭ বলে ৩৭ রান করে মাহমুদুল্লাহ আউট হলে ফের চিন্তার ভাঁজ পড়ে টিম টাইগারদের। কিন্তু সব চিন্তা দূর করে দেন মুশফিকুর রহিম। মাহমুদুল্লাহ সাজঘরে ফেরার পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে জুটি বাঁধেন নাজমুল। শেষ পর্যন্ত তারা দুজন জয় তুলেই মাঠ ছাড়েন।

নাজমুল হোসেন শান্ত একের পর এক সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে সমালোচকদের জবাব দিয়েই যাচ্ছেন। জাতীয় দলে অন্তর্ভূক্তির পর থেকে ব্যর্থতা ও স্বজনপ্রীতিসহ নানান সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। কিন্তু পারফরমেন্স দিয়েই দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। পেয়েন নেতৃত্ব ভারও।

এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে গেছেন ওপেনার লিটন দাস। বাঁহাতি লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার গুড লেন্থে করা বল ডিফেন্ড করতে গেলে ব্যাটের কানায় লাগে লিটনের। সেই বল উপড়ে ফেলে লিটনের লেগ স্টাম্প। গোল্ডেন ডাক মেরেই সাজঘরে ফেরত যান বাংলাদেশ ওপেনার।

মাদুশঙ্কার দ্বিতীয় ওভারেই আউট হয়ে যান সৌম্য সরকার। মিডঅফে খেলতে গিয়ে মাহিশ থিকসানার হাতে সহজ ক্যাচ হন সৌম্য (৯ বলে ৩)। দাঁড়াতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়ও। ৮ বলে ৩ রান করে প্রমধ মাদুশানের বলে তিনিও বোল্ড হন।

এরপর শান্তকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে বেশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারেননি। ফিরেছেন ৩৭ বলে ৩৭ রান করে। লাহিরু কুমারাকে ঘুরিয়ে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ হন দিলশান মাদুশঙ্কার।

মাহমুদুল্লাহ সাজঘরে ফেরার পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে জুটি বাঁধেন নাজমুল। মুশফিকুর রহিম ৮৪ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে মুশফিক চার মারেন ৮টি। দুই ক্যাপ্টেনের (টিম ও উইকেট) অপরাজিত দুই ইনিংসে ভর করে ৫ ওভার ২ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে টিম টাইগার।

এদিন চট্টগ্রামে টসভাগ্য সহায় হয়নি বাংলাদেশের। ব্যাটিংবান্ধব পিচে টস জিতে ব্যাট নিতে ভুল করেনি লঙ্কানরা। ব্যাটিংবান্ধব পিচে তানজিম সাকিব, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের তোপে ৪৮.৫ ওভারে ২৫৫ রানে অলআউট হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটি ভাঙতেই রীতিমত ঘাম ঝরছিল বাংলাদেশের। আভিস্কা ফার্নান্ডো আর পাথুম নিশাঙ্কা ঝোড়ো গতিতে রান তুলে যাচ্ছিলেন। অবশেষে তাদের ৫৯ বলে ৭১ রানের মারকুটে জুটিটি ভাঙেন তানজিম হাসান সাকিব।

সাকিব নিজের দ্বিতীয় আর ইনিংসের দশম ওভারে এসে আঘাত হেনেছেন। ৩৩ বলে ৩৩ করে আভিস্কা ফার্নান্ডো অনেকটা সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ হয়েছেন।

নিজের পরের ওভারে আরেক সেট ব্যাটার পাথুম নিশাঙ্কাকেও ফিরিয়েছেন তানজিম সাকিব। এবার স্লিপে সৌম্য সরকার নিয়েছেন ক্যাচ। নিশাঙ্কা করেন ২৮ বলে ৩৬।

এরপর ১৪তম ওভারে আরও এক শিকার তানজিম সাকিবের। তার দুর্দান্ত এক ডেলিভারি সাদিরা সামারাবিক্রমা (৩) ডিফেন্ড করতে গিয়েও ব্যাটে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। মুশফিকুর রহিম ঝাঁপিয়ে পড়ে নেন দারুণ এক ক্যাচ।

চতুর্থ উইকেটে আবার জুটি করে শ্রীলঙ্কা। এই উইকেটে কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আশালঙ্কা করেন ৭৩ বলে ৪৪ রানের জুটি। তবে তাদের ফিফটি রানের জুটি করতে দেননি অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৭ বলে ১৮ রান করা আশালঙ্কাকে ফেরান বোল্ড করে জুটি ভাঙেন তিনি।

দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া শ্রীলঙ্কাকে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কুশল মেন্ডিস। ফিফটি হাঁকানোর সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন তিনি। তবে তাকে বেশি দূর এগুতে দেননি সেনসেশনাল পেসার তাসকিন আহমেদ।

৭৫ বলে ৫৯ করা মেন্ডিসকে মিডঅফ অঞ্চলে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানান তিনি। মেন্ডিসকে ফিরিয়ে দ্রুতগতির ৬৯ রানের জুটিও ভাঙেন ডানহাতি এই পেসার। জেনিথ লিয়ানেজের সঙ্গে ৬৮ বলে এই জুটি করেন মেন্ডিস।

লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৯ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন লিয়ানেজ। শরিফুলের বলে বিহাইন্ড দ্য উইকেট মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ হন তিনি। ১৪ বলে ১৩ রান করা হাসারাঙ্গাকে তাওহিদ হৃদয়ের হাতের ক্যাচ বানান তাসকিন।

প্রমধ মাদুশান ৮ ও লাহিরু কুমারা ৫ রান করেন। অবশেষে ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতেই ২৫৫ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট শিকার করেছেন তানজিম সাকিব, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।