সবুজ আলো প্রতিবেদক 27 March 2023 , 6:20:34
পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গাড়িচালক সম্রাটকে (৩০) হত্যার মামলার মূল আসামী তাঁর বন্ধু আব্দুল মমিনকে (৩২) গ্রেফতার করেছে র্যাব। রোববার (২৬ মার্চ) রাতে ঢাকার হাতিরঝিল থানার বাংলামোটর এলাকা থেকে মমিনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের কারণে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে রূপপুর প্রকল্পের গাড়িচালক সম্রাট হোসেনকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে।’
র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার সম্রাট হত্যা মামলার প্রধান আসামী সম্রাটের বন্ধু আ. মমিন (৩২) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য জানিয়েছেন। তবে, কিভাবে, কোন পরিকল্পনায়, কাদের সাহায্যে সম্রাটকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি র্যাব।
সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে র্যাব-১২ এর হেডকোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মো. মারুফ হোসেন আসামি মমিনকে গ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরেন।
রোববার (২৬ মার্চ) রাতে ঢাকার হাতিরঝিল থানার বাংলামোটর এলাকা থেকে মমিনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারকৃত মমিন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা মধ্যপাড়া (দোকানপাড়া) গ্রামের বাহাদুর খাঁর ছেলে। নিহত সম্রাট একই উপজেলার মধ্য অরনকোলা রিফুজি কলোনী এলাকার আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এখন পর্যন্ত মোট দুইজন আসামী গ্রেপ্তার হলো। এর আগে মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার (২৬ মার্চ) সীমাকে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
র্যাব-১২, সিরাজগঞ্জের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন পিপিএম জানান, হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে ঈশ্বরদী থানায় শনিবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৫৮। ধারা ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। মামলায় সম্রাটের বন্ধু মমিনকে এক নাম্বার ও তার স্ত্রী সীমাকে দুই নাম্বার আসামীসহ আরও ৩ থেকে ৪ জনকে অজ্ঞাতানামা আসামী করা হয়েছে।
হত্যাকান্ডের পর থেকেই আসামী মমিন আত্মগোপনে চলে যায়। পলাতক এজাহার নামীয় আসামী মমিনকে গ্রেফতারের ব্যাপারে র্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। তারই ধারাবাহিকতায় আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-১২, সিরাজগঞ্জের একটি দল, র্যাব-৩ এর সহযোগীতায় ঢাকার হাতিরঝিল থানার বাংলামোটর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মমিনকে গ্রেফতার করে।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামী মমিনকে সোমবার ঈশ্বরদী থানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে। তারপর আইনগত প্রক্রিয়া তারা করবেন।
র্যাব জানায়, নিহত সম্রাট প্রায় তিন বছর যাবত রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিকিম কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউরি ফেদারোপের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চালক সম্রাট প্রতিদিন রাত সাড়ে দশটার মধ্যে ডিউটি শেষে বাড়িতে ফেরত যেতেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সম্রাট ডিউটি শেষে নিজ বাড়িতে না ফিরলে, তার পরিবারের লোকজন তার মোবাইলে ফোন দিলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পায়।
পরদিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) নিকিম কোম্পানীর অন্য চালকদের কাছে নিহতের বাবা সম্রাটের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে, চালক সম্রাট ২৩ মার্চ রাত ৮টা ১০ মিনিটে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ডিউটি শেষ করে অফিসের প্রাডো গাড়ি যাহার নং- ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫-৪৭৪৮ নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছেন। তখন পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে তারা জানতে পারে যে সম্রাট অফিসের গাড়িসহ বাঁশেরবাদা মধ্যপাড়ায় তার পূর্ব পরিচিত বন্ধু আব্দুল মমিনের বাসায় গিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে সম্রাটের পরিবারের লোকজন মমিনের বাসায় গিয়ে মমিন কে না পেয়ে তার স্ত্রী সীমা খাতুনের কাছে সম্রাটের ব্যাপারে জানাতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয় এবং সম্রাটের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলা হতে বিরত থাকেন।
চালক সম্রাট ও তার চালিত গাড়ি খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আড়–য়াবান্দা গ্রামের শিলাইদহ ঘাট নামক স্থান থেকে পুলিশ একটি সাদা জিপ গাড়িসহ চালক সম্রাটের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে।
এর আগে শুক্রবার রাতে বিভিন্ন সূত্রে ধরে পুলিশ ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা এলাকার নিখোঁজ সম্রাটের বন্ধু আব্দুল মমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রী সীমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
সীমা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে সম্রাট তাদের বাসায় গিয়ে তার মাথা ধরেছে বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। তার স্বামী মমিন ঔষধ আনতে বাইরে গেলে সম্রাট সীমার শরীরে হাত দেয়। তখন তিনি রাগে ও ক্ষোভে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় ও গোপানাঙ্গে আঘাত করলে সম্রাট মারা যায়। পরে তার স্বামী বাসায় ফিরলে লাশ বস্তায় ভরে ওই গাড়ীতে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করেন। পরে মমিন তার স্ত্রী সীমাকে গাড়ী থেকে নামিয়ে দিয়ে শিলাইদহ ঘাটে লাশহসহ গাড়ী রেখে পালিয়ে যায়।