দর্জি হাসিনুরের খুনী সাবেক স্ত্রীর ছোট বোনের স্বামী
সবুজ আলো প্রতিবেদক
20 August 2023 , 10:02:06
গ্রেপ্তারকৃত রিমনকে নিয়ে পুলিশের উদ্ধার অভিযানের সময়।
পাবনার ভাঙ্গুড়ার দর্জি হাসিনুর রহমান হাসু’র (৫৩) ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে থানা-পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম রিমন সরকার (২৩)।সে উপজেলার রাঙ্গালিয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আতিকুল ইসলাম সরকারের পুত্র ও হাসু’র সাবেক স্ত্রী সাজেদা খাতুনের ছোট বোনের স্বামী। শনিবার (১৯ আগস্ট) রাতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিমন এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ রোববার (২০ আগস্ট) দুপুরে নিহত হাসু’র বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে হত্যায় ব্যবহৃত লোহার শাবল ও দা উদ্ধার করা হয়।
রিমন সরকারের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি রাশিদুল ইসলাম জানান, নিহত দর্জি হাসিনুর রহমান হাসু তাঁর স্ত্রী সাজেদা খাতুনকে পারিবারিক দ্বন্দ্বে কিছুদিন আগে তালাক দেন। তাদের সংসারে সন্তানও রয়েছে। তালাকের পর থেকে সাজেদা খাতুন নানাভাবে চেষ্টা করছিলেন হাসুর সংসারে ফিরে যাবার। এমন অবস্থায় তিনি এক কবিরাজের মাধ্যমে স্বামীকে বশে আনতে ও তাঁর মন জয় করতে একটি তাবিজ নিয়ে আসেন। সেই তাবিজটি তার ছোট বোনের স্বামী রিমন সরকারকে দিয়ে বলেন, হাসিনুরের বাড়ির যাতায়াতের পথে মাটিতে পুঁতে রেখে আসতে।
সেই মোতাবেক রিমন গত ১৫ আগস্ট রাতে হাসিনুরের বাড়ির সামনে মাটিতে তাবিজটি পুঁতে রাখেন। তাবিজ পোঁতা শেষে রিমনকে দেখে ফেলেন হাসিনুর। তাকে ঘরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, এত রাতে বাড়ির সামনে কেন, কি উদ্দেশ্যে।
একপর্যায়ে রিমন ঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করলে হাসিনুর তাকে জাপটে ধরে রাখেন। পরে রিমন এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘরে থাকা লোহার শাবল দিয়ে হাসিনুরের মাথায় আঘাত করেন। এ সময় হাসিনুর ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে তার মাথায় আরও কয়েকটি আঘাত করেন রিমন। পরে শাবল, একটি দা ও হাসিনুরের মোবাইল ফোনটি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। সেইসাথে ঘরের পেছনে মাটির মেঝে কেটে চোর ঢোকার পথ তৈরি করে পালিয়ে যান। যাবার সময় বাড়ির সেফটিক ট্যাংকের মধ্যে শাবল ও দা ফেলে দিয়ে চলে যান।
এরপর হাসিনুরের মোবাইলের সিম খুলে ফেলে দিয়ে সেখানে নিজের সিম তুলে তার স্ত্রীর বড় বোন সাজেদা খাতুনকে কল দেন। তিনি জানান, তাবিজ মাটিতে পোঁতার কাজ হয়ে গেছে, চিন্তার কিছু নেই। নিজেকে নিরাপদ রাখতে রিমন তাকে আরও জানান, হাসিনুরের বাড়ির সামনে তিনজন মুখোশ পরা মানুষ ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন তিনি। যাতে হত্যার সন্দেহ তার দিকে না আসে। এরপর নিশ্চিন্তে নিজ বাড়িতে থেকে সব কাজ করছিলেন রিমন সরকার।
ওসি আরও জানান, এ ঘটনার পর থেকেই পুলিশ এর রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা চালায়।এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা বের করার চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার চৌবাড়ীয়া হারোপাড়া গ্রামের দর্জি হাসিনুর রহমান হাসু’র ক্ষতবিক্ষত লাশ তাঁর শয়ন কক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের ছেলে রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।