পাবনা

পাবনার রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি : রাষ্ট্রপতি

  সবুজ আলো ডেস্ক ১৬ মে ২০২৩ , ১০:২৬:৫৬

‘আমি ভেসে আসিনি, একেবারে রাজপথ থেকেই বঙ্গভবনে গিয়েছি। পাবনার রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি। আমি বঙ্গবন্ধুর ছোঁয়া পেয়েছি। কারাগারে যেতে হয়েছে। চরম অত্যাচারিত হয়েছি ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে।’

মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকেলে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত নাগরিক কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পাবনার সূর্য সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন এসব কথা বলেন।

এ সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা তৈরি দেশের জন্য কখনো মঙ্গলজনক হয় না। রাজনৈতিক হিংসা ভুলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গত ১৪ বছরের নানা অগ্রগতি ও পূর্বের অবস্থা মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংস করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক চেতনা আবার ফিরে এসেছে।’

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এটা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু আমি শক্ত হাতে মোকাবিলা করেছি। আমি ভেসে আসিনি, একেবারে রাজপথ থেকেই বঙ্গভবনে গিয়েছি।’

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি। পাবনার আলো-বাতাস, প্রকৃতি-পরিবেশ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে আমি বেড়ে উঠেছি। তাই রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগেও আমি আপনাদের ছিলাম, এখনো আমি আপনাদেরই আছি। ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতে আপনাদের লোক হিসেবেই বেঁচে থাকতে চাই। বঙ্গভবনে অবস্থান করলেও পাবনার কথা মনে আসলেই আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। আমি ১৯৬৭-৬৮ সালে এই কলেজের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পরে ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সভাপতিও হয়েছিলাম। তখন প্রতিকূল পরিবেশে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে রাজনীতি করতে হয়েছিল। রাজনীতি করার সুবাদেই আমার আদর্শ, আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য আর মমতামাখা স্পর্শ কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়। একজন তরুণ ছাত্রনেতাকে কীভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হতে অনুপ্রাণিত করতে হয়, সেদিন আমি শিখেছিলাম এই মহান নেতার কাছ থেকে।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আমি এই পাবনা শহরে প্রতিরোধ মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট আমাকে গ্রেপ্তার করে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা তিন মাস চলে অসহ্য-অমানবিক নির্যাতন। তারপর তিন বছর কারাভোগের পর ১৯৭৮ সালে আমি কারাগার থেকে মুক্তি পাই।’

রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের রাষ্ট্রপতি হব, এটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু ভাগ্য আজ আমাকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়েছে। আপনাদের দোয়া আর ভালোবাসা ছিল বলেই আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আপনাদের ভালোবাসাকে সঙ্গী করেই রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই। এ জন্য আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা চাই। পাবনা জেলা ও দেশের উন্নয়নে আপনারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর অবদান রাখবেন এটাই আমি প্রত্যাশা করি।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা প্রভাব থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। মানুষের গড় আয়ু ও জীবযাত্রার মান বেড়েছে এবং বিভিন্ন উন্নয়নসূচকে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থায় অবস্থান করছে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।’

এ সময় তিনি পাবনা থেকে সরাসরি ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেন‌। সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন। ধাপে ধাপে পাবনাবাসীর দাবি পূরণে আশ্বাস দেন রাষ্ট্রপতি।

পাবনার সূর্যসন্তান মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আমার আগমন ঘিরে পাবনায় যে এইভাবে আয়োজন হবে তা কল্পনাও করিনি। পাবনাবাসীর এই উচ্ছ্বাসের ঋণ আমি কীভাবে শোধ করবো? আমি চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো। এই আয়োজন আমি জীবনেও ভুলবো না। পাবনা এ্যাডওয়ার্ড কলেজের স্মৃতিবিজড়িত এই ঐতিহাসিক মাঠে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আপনাদের এত ভালোভাসা ও সম্মান পেয়ে আমি আবেগাপ্লুত, আনন্দিত। ঢাকার বাহিরে প্রথম সফরেই নিজ জন্মস্থান পাবনায় আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

এর আগে ৩টা ২৪ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি। এ সময় দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাঁকে বরণ করেন পাবনাবাসী। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতসহ ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে বিকেল ৩টা ২৭ মিনিটে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী ফার্স্ট লেডি ড. রেবেকা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলামের সভাপতিত্বে নাগরিক সংবর্ধনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু, পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, নারী সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক  অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, সদস্যসচিব-১ অধ্যাপক শিবজিত নাগ, সদস্যসচিব-২ আব্দুল মতীন খান এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন।

এর আগে চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে বেলা ১১টার দিকে পাবনার বিসিক শিল্পনগরীতে স্কয়ার সায়েন্স এন্ড লাইফ প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। পরে দুপুর ১২টার দিকে পাবনা প্রেসক্লাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

সোমবার (১৫ মে) সকাল ১২টা ৮ মিনিটে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে নিজ জেলা পাবনায় এসে পৌঁছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর পাবনা সার্কিট হাউজে উপস্থিত হয়ে গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর দুপুর দেড়টায় জেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরের নাম ফলক উদ্বোধন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দুইটার দিকে পাবনা সদর আরিফপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাতে অংশ নেন। এরপর তিনি স্কয়ার বাগানবাড়িতে পারিবারিক সমাধিস্থলে উপস্থিতি, পুষ্প অর্পণ এবং প্রার্থনায় অংশ নিয়ে প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষ করে সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন।

রাষ্ট্রপতির প্রটোকল অফিসার নবিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সফরসূচি অনু্যায়ী জানা গেছে, সফরের তৃতীয় দিন ১৭ মে বুধবার বেলা ১১টায় পাবনা ডায়াবেটিক সমিতি পরিদর্শন। বিকাল ৪টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু কর্নার, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল উদ্বোধন এবং আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এছাড়া বিকালে ৫টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনোদন পার্ক পরিদর্শন করবেন।

১৮ মে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় সার্কিট হাউজে গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে ১১.৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন।

পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির পাবনা সফর ঘিরে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। তার পাবনা সফর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপর রয়েছি।