পঞ্চমবারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হল চেন্নাই সুপার কিংস। ইনিংসের শেষ ওভারে চেন্নাই সুপার কিংসের দরকার ছিল ১৩ রান। মোহিত শর্মার প্রথম চার বলে আসে ৩ রান। শেষ দুই বলে ১০ রান দরকার—এমন অবস্থায় ফিনিশারের কাজটা দুর্দান্তভাবে করলেন রবীন্দ্র জাদেজা। ছক্কার পর চার রান; শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালের কী দুরন্ত সমাপ্তি!
এভাবে রুদ্ধশ্বাস এই ফাইনালে ৫ উইকেটে নাটকীয় জয় পায় চেন্নাই। গুজরাট টাইটান্সের টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বপ্ন ভেঙে চ্যাম্পিয়ন হলো চেন্নাই সুপার কিংস।
আইপিএলে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জিতলো ধোনির দল। তাদের সমান ৫টি শিরোপা কেবল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের।
সোমবার (২৯ মে) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে হাইভোল্টেজ ফাইনালে গুজরাটের দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চেন্নাই মাত্র ৩ বল মোকাবিলা করার পরই বৃষ্টি নামে। এরপর ১৫ ওভারে ধোনির দলের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭১ রান।
এই রান তাড়া করতে নেমে চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও ঋতুরাজ গায়কোয়াদ ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন।
এর আগে, রোববার (২৮ মে) ছিল ফাইনালের নির্ধারিত দিন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে টসই করা গেল না। ফলে ম্যাচ গড়ায় রিজার্ভ ডেতে। সেই রিজার্ভ ডেতেও এক ইনিংস যাওয়ার পর বৃষ্টির হানা।
ফলে সোমবারের ম্যাচ সময়ের হিসেবে মঙ্গলবার চলে গেল। আদতে একটা ফাইনাল শেষ করতে লাগল তিন দিন! তবে এতটা অপেক্ষার পর হতাশ হতে হয়নি সমর্থকদের। এমন ম্যাচ দেখার সৌভাগ্য যে মেলে কালেভদ্রে!
বৃষ্টি হতে পারতো চেন্নাইয়ে অভিশাপ, সেটি হয়েছে আশীর্বাদ। অভিশাপ কিভাবে? এই ম্যাচটি যদি পরিত্যক্ত হতো, তবে গ্রুপপর্বে পয়েন্ট বেশি থাকার সুবাদে চ্যাম্পিয়ন হতো গুজরাট টাইটান্স। কিন্তু বৃষ্টি এসে উল্টো আশীর্বাদ করে দিলো মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে।
গুজরাট তাদের সামনে ২০ ওভারে ছুড়ে দিয়েছিল ২১৫ রানের বিশাল লক্ষ্য। ম্যাচ পুরোটা হলে কাজটা কঠিনই হতো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ওভার কমে যায়। ফলে ১৫ ওভারে চেন্নাইয়ের সামনে বেঁধে দেওয়া হয় ১৭১ রানের লক্ষ্য। চেন্নাই অবশ্য রান তাড়ায় ভালোভাবেই ছিল। ওপেনার রুতুরাজ গাইকদের ১৬ বলে ২৬, ডেভন কনওয়ের ২৫ বলে ৪৭ আর আজিঙ্কা রাহানের ১৩ বলে ২৭ রানে বেশ ভালো অবস্থানে দাঁড়ায় ধোনির দল।
১২.৩ ওভার শেষে রান ছিল ৩ উইকেটে ১৪৯। অর্থাৎ শেষ ১৫ বলে চেন্নাইয়ের লাগতো ২২ রান, হাতে ৭ উইকেট। এমন সময়ে এসে জোড়া উইকেট শিকার করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন মোহিত শর্মা।
বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামা আম্বাতি রাইডুকে (৮ বলে ১৯) আর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে গোল্ডেন ডাকে (১ বলে ০) ফেরান এই পেসার। চাপে পড়ে চেন্নাই। ১৪তম ওভারে মোহাম্মদ শামি দেন মাত্র ৮ রান। ফলে শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার পড়ে ১৪।
মোহিত প্রথম ৪ বলে মাত্র ৪ রান দিলে ম্যাচ ঝুলে যায় গুজরাটের দিকে। সেখান থেকে রবীন্দ্র জাদেজার অসাধ্য সাধন। পঞ্চম বলে লংঅনের ওপর দিয়ে ছক্কা, শেষ বলে মোহিতের লো ফুলটস শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে চার। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস জাদেজার। ধোনি যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, অনেকটা সময় তিনি মাথা নিচু করে বসেছিলেন ডাগআউটে।
এর আগে সাই সুদর্শনের ৪৭ বলে ৯৬ রানের (৮ চার আর ৬ ছক্কা) বিধ্বংসী ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২১৪ রান তুলেছিল গুজরাট। এছাড়া ঋদ্ধিমান সাহা ৩৯ বলে ৫৪, শুভমান গিল ২০ বলে ৩৯ এবং হার্দিক পান্ডিয়া ১২ বলে করেন অপরাজিত ২১ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গুজরাট টাইটান্স: ২০ ওভারে ২১৪/৪ (ঋদ্ধিমান ৫৪, গিল ৩৯, সুদর্শন ৯৬, পান্ডিয়া ২১*, রশিদ ০; দিপক ৪-০-৩৮-১, দেশপান্ডে ৪-০-৫৬-০, থিকশানা ৪-০-৩৬-০, জাদেজা ৪-০-৩৮-১, পাথিরানা ৪-০-৪৪-২)
চেন্নাই সুপার কিংস: (১৫ ওভারে লক্ষ্য ১৭১) ১৫ ওভারে ১৭১/৫ (রুতুরাজ ২৬, কনওয়ে ৪৭, দুবে ৩২, রাহানে ২৭, রায়ডু ১৯, ধোনি ০, জাদেজা ১৫* শামি ৩-০-২৯-০, পান্ডিয়া ১-০-১৪-০, রশিদ ৩-০-৪৪-০, নুর ৩-০-১৭-২, লিটল ২-০-৩০-০, মোহিত ৩-০-৩৬-৩)
ফল: চেন্নাই সুপার কিংস ৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন