ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৫৭ উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ হবে আজ মঙ্গলবার (২১ মে)। এর মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে ২৪ উপজেলায়। বাকিগুলোতে ব্যবহৃত হবে ব্যালট পেপার। দুর্গম কেন্দ্রগুলোতে গতকালই ভোটের সরঞ্জাম পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আজ সকালে ভোটগ্রহণের আগে বাকি কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপার যাবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোটগ্রহণ।
ভোট উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটের আগে পরে পাঁচদিনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে নেমেছে র্যাব ও বিজিবি। প্রতিটি উপজেলার মাঠে নেমেছেন একজন করে জুডিশিয়াল বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। আচরণবিধি দেখভাল করার জন্য এরই মধ্যে মাঠে রয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপের ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার ওপর জোর দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের পর কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিতের চেষ্টা চালিয়েছিল ইসি, এখন আর সেই পথে নেই নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। সুষ্ঠু ভোটকেই প্রাধ্যান্য দেয়া হচ্ছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
নির্বাচন ভবনে ভোটের দিন মাঠের প্রকৃত চিত্র স্বচক্ষে দেখতে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে অপ্রীতিকর ও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের খবর পাবেন, সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রধানদের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে ইসি। কেন্দ্রে জালভোট বন্ধ এবং ভোটারদের কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে ঘরে ফেরা নিশ্চয়তা দিতে সতর্ক থাকবে ইসির নিয়ন্ত্রণে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সমতলে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ জন করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জনের ফোর্স মোতায়েন থাকবে। দুর্গম ও পার্বত্য এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২১ জনের ফোর্স মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রতি ইউনিয়নে থাকবে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে বিশেষ করে বিজিবির প্রতিটি মোবাইল টিমের সঙ্গে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
প্রার্থী ও ভোটার: দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১ হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৬৯৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৫২৮ জন রয়েছেন। নির্বাচনে ভোটার ৩ কোটি ৪২ লাখ। ভোটকেন্দ্র ১৩ হাজার ১৬টি এবং ভোটকক্ষ ৯১ হাজার ৫৮৯টি। এ নির্বাচনে ৭ জন চেয়ারম্যানসহ ২২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওইসব পদে ভোট হবে না।
৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন: দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৫৭ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার এর আওতায় ১৯ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
দুই লাখ আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন: নির্বাচনকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ভোট কেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভোটদানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোট ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৭ জন সদস্য মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহকারি পরিচালক (ভিডিপি প্রশিক্ষণ) ও গণসংযোগ কর্মকর্তা (অতি. দায়িত্ব) মো. রুবেল হোসাইন জানান, দ্বিতীয় ধাপে প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রের নিরাপত্তায় মোট ১৩ জন বা ততোধিক আনসার ও ভিডিপি সদস্য ইতোমধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে একজন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) ও দুজন সহকারী প্লাটুন কমান্ডারের (এপিসি) নেতৃত্বে ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা আনসার-ভিডিপি সদস্য রয়েছেন। কোনো কেন্দ্রে বুথ সংখ্যা ৬টির বেশি হলে বুথ প্রতি অতিরিক্ত আরও একজন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পিসি ও এপিসিগণ (৩ জন) অস্ত্রসহ এবং আনসার-ভিডিপি সদস্যরা অস্ত্রবিহীন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ভোট কেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা রক্ষায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫২৭ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের পাশাপাশি ৭৯ প্লাটুন (২৩৭০ জন) আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালনের জন্য স্ট্রাইকিং/স্ট্যাটিক ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে। মোবাইল টিমে বা স্ট্রাইকিং ফোর্সে দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যগণ ন্যূনতম সেকশন (প্রতি সেকশন ১০ জন করে) ফরমেশনে দায়িত্বপালন করবেন। তাছাড়া পুলিশের মোবাইল টিম বা স্ট্রাইকিং টিমের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন প্রায় ১০৫ প্লাটুন (৩২৪০ জন) সশস্ত্র আনসার ভিডিপি সদস্য।
২৪ উপজেলায় ইভিএমে ভোট হবে: উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি উপজেলায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সহকারী পরিচালক (বৈধ এবং সঠিকতা যাচাইকরণ) মুহা. সরওয়ার হোসেনের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৫৭টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ২৪টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে হবে। ২৪টি উপজেলার ইভিএম মেশিনের কার্যক্রম নির্বাচন ভবনের ‘ইভিএম কন্ট্রোল রুম’ থেকে পরিচালনা করা হবে।