খেলাধুলা

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের

  সবুজ আলো ডেস্ক ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৯:৫১:০০

নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জিতল বাংলাদেশ। আগের ১৮ বারের দেখায় কোনোটিতেই জয় পায়নি বাংলাদেশ। অবশেষে শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) নেপিয়ারে দাপুটে জয়ে নতুন করে ইতিহাস লিখল বাংলাদেশ।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিন টাইগার বোলার শরিফুল ইসলাম, তানজিম সাকিব ও সৌম্য সরকারের বোলিং তোপে মাত্র ৯৮ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। ৯৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৫ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। কিউইদের বিপক্ষে আজ অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেশুনে খেলতে থাকেন টাইগারদের দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও এনামুল হক বিজয়। কিন্তু ইনিংসের পঞ্চম ওভারে চোখে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছিল সৌম্যর। ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছিলেন না বলে ইঙ্গিত করছিলেন। পানিও দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। পরে ফিজিওকে ডেকে পাঠান। তার চোখ পর্যবেক্ষণ করে দেওয়া হয় ড্রপ। তবে সমস্যার সমাধান হয়নি। তাতে ১৬ বলে ৪ রান করা সৌম্য বাধ্য হয়ে ছাড়েন ক্রিজ।

সৌম্যর পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বিজয়কে নিয়ে দেখেশুনেই খেলতে থাকেন তিনি। ধীরে ধীরে টাইগাররা এগিয়ে যাচ্ছিল জয়ের দিকে। এর মাঝেই বাংলাদেশের সামনে সুযোগ আসে কিউইদের ১০ উইকেটে হারানোর। ১৯৮৭ সালের পর আর কখনো ১০ উইকেটে হারেনি নিউজিল্যান্ড।

কিন্তু দলীয় ৮৪ রানে বিজয়ের বিদায়ে সেই সুযোগ হারায় টাইগাররা। ৩৩ বলে ৩৭ করে বিজয় উইলিয়াম ও’রোর্কের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে গেলে ভাঙে ৬৯ রানের জুটি।

বিজয় যখন ফেরেন, তখন জয় থেকে কেবল ১৫ রান দূরে ছিল বাংলাদেশ। বাকি কাজটা লিটনকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুতই শেষ করেছেন শান্ত। এরই মধ্যে নিজের হাফ সেঞ্চুরিটাও তুলে নেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। কিউইদের আজ তিনি ৪২ বলে তুলে নেন ৫০ রান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

এর আগে নেপিয়ারে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১৬ রানেই প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা। তানজিম সাকিবের শিকার হয়ে শুরুতেই সাজঘরে ফিরেন রাচিন রবীন্দ্র। ১২ বলে মাত্র ৮ রান করে তানজিম সাকিবের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে।

রাচিনের পর হেনরি নিকোলসকেও ফেরান তানজিম সাকিব। সাকিবের বলে মিড অনে অধিনায়ক শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।

তানজিম সাকিবের পর কিউই শিবিরে আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। একে একে সাজঘরে ফেরান টম লাথাম, উইল ইয়ং ও মার্ক চ্যাপম্যানকে।

শরিফুলের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান টম লাথাম। আউট হওয়ার আগে করেন ৩৪ বলে ২১ রান। টম লাথামের পথ ধরে সাজঘরে ফিরে যান উইল ইয়ংও। শরিফুলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ৬১ রানেই ৪ উইকেট হারায় কিউইরা।

দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে সাজঘরে ফিরে যান মার্ক চ্যাপম্যানও। তাকেও ফেরান শরিফুল। শরিফুলের বলে বোল্ড হয়ে মাত্র ২ রান করেই সাজঘরে ফিরে যান মার্ক চ্যাপম্যান।

শরিফুলের পর আবারও কিউই শিবিরে আঘাত হানেন তানজিম সাকিব। তুলে নেন নিজের তৃতীয় উইকেট। সাকিবের বলে ব্যাওয়ার্ড পয়েন্টে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন টম ব্লান্ডেল। আউট হওয়ার আগে করেন ১৭ বলে ৪ রান।

তানজিম সাকিব আর শরিফুলের পর কিউই শিবিরে আঘাত হানেন সৌম্য সরকার। সৌম্যর বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান জস ক্লার্কসন। আউট হওয়ার আগে করেন ২৩ বলে ১৬ রান। জস ক্লার্কসনের পর অ্যাডাম মিলনকেও ফেরান সৌম্য। তিনিও বোল্ড হয়ে ফিরেন সাজঘরে।

জস ক্লার্কসনের আর অ্যাডাম মিলনের পর সৌম্যর শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান আদিত্য অশোকও। সৌম্যর বলে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। তার বিদায়ে ৯৭ রানেই ৯ উইকেট হারায় কিউইরা।

এ তিন বোলারের পর কিউই শিবিরে আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান উইলিয়াম ও’রোর্ক। এর ফলে মাত্র ৯৮ রানেই অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।

এর মাধ্যমে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে কম রান করায় নতুন রেকর্ড গড়েছে তারা। এর আগে টাইগারদের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে কিউইদের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ১৬২। যেটি ২০১৩ সালে মিরপুরের শেরে বাংলায় করেছিল তারা।

বাংলাদেশ একাদশ

নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, লিটন দাস, এনামুল হক, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, শরীফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।

নিউজিল্যান্ড একাদশ

উইল ইয়াং, রাচিন রবীন্দ্র, হেনরি নিকোলস, টম ল্যাথাম (অধিনায়ক), টম ব্লান্ডেল, মার্ক চাপম্যান, জশ ক্লার্কসন, অ্যাডাম মিলনে, আদি অশোক, জ্যাকব ডাফি ও উইলিয়াম ও’রর্ক।