মতামত

“১৫ তে পা পাবনা মেডিকেল কলেজ এর আবাহনে, এসো মিলি সবে মৈত্রির বন্ধনে”

  ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম ১৮ নভেম্বর ২০২৩ , ১২:৪১:২৯

আজ ১৮ই নভেম্বর। রাজশাহী বিভাগের নতুন শিক্ষা শহর হিসাবে পরিচিত হওয়া পাবনা শহরে ১৫ বছর আগের এই দিনে, ২০০৮ সালে একটা মেডিকেল কলেজের প্রাণ – উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত প্রিয় শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়েছিল পাবনা মানসিক হাসপাতালের পাশে প্রতিষ্ঠিত সাময়িক ক্যাম্পাস।

তবে পাবনা মেডিকেল কলেজের ইতিহাস কিন্তু আরো অনেক পুরোনো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও তৎকালীন সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের সময় খুব ন্যাক্কারজনক ভাবে পাবনা মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা অনুযায়ী পুনরায় ২২-০৯-২০০৮ তারিখে পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রায় একশ বিঘা জমি স্থানান্তর করে পাবনা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় এবং ওই বছরেই পাবনা মানসিক হাসপাতালের ক্যাম্পাসে চালু হয় পাবনা মেডিকেল কলেজ। পরে নিজস্ব প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয় এবং ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মেডিকেল কলেজ ভবন উদ্বোধন করেন। কিন্তু এরপর প্রয়োজনীয় আরও অনেক অবকাঠামো প্রয়োজন থাকলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

একটা মেডিকেল কলেজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হলো শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখানোর জন্য একটি অত্যাধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।২০১৮ সালে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ভারত সরকারের অর্থানুকূল্যে ৬০০ কোটি টাকা একনেকে পাশ হয়। এরপর টেন্ডারও হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই পাবনা পুলিশ লাইনস মাঠে জনসভায় ভাষণ দেয়ার আগে ৫০০ বেডের এই পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এ অবস্থায় সবকিছু প্রায় ঠিকঠাকই ছিল এবং ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ভারতীয় তৎকালীন হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা এবং তৎকালীন মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিমের যৌথভাবে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের দিনও ধার্য হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই কর্মসূচি বাতিল হয় এবং এরপর থেকে হাসপাতালের বিষয়টি অন্ধকারে চলে যায়। পরবর্তীতে প্রকল্পটিই বাতিল হয়ে যায়।

এদিকে ১ যুগেরও বেশি আগে পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হলেও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিখতে পারছিল না। ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজের আউট টিচিং ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। কিন্তু সেখানকার অবস্থাও শোচনীয় বলে পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের এটি কোন কাজে আসছিল না। শিক্ষার্থীদের ৬ কিলোমিটার দূরে ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে প্রতিদিন প্রাকটিক্যাল ক্লাস করতে অসম্ভব বেগ পেতে হচ্ছিল।সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সরাসরি হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ জনসাধারণের জেলাবাসীর জন্য স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পের সার সংক্ষেপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হয়।

বঙ্গভবনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এত দীর্ঘদিনেও মেডিকেলের কলেজ হাসপাতাল না হওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং দ্রুত এটি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার শের এ বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ২য় সভায় পাবনা মেডিকেল কলেজসহ দেশের আরও ৩টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পও এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে।

অবশেষে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার এক যুগের ও বেশি সময় পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির উদ্বোধনের মাধ্যমে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আশা করা যায় অচিরেই আলোর মুখ দেখছে।

সব প্রতিবন্ধতাকে পেছনে ফেলে গুটি গুটি পায়ে এই মেডিকেল কলেজ ১৫ বছর পার করে ফেলেছে। পাইওনিয়র পি ১ ব্যাচ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। এরপর একে একে আমাদের এই প্রাণের ক্যাম্পাসকে নিজ নিজ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং উচ্ছাস দিয়ে মুখরিত করেছে লিজেন্ডস পি২,,ইনভিন্সিবল পি৩, অদম্য পি-8,এ্যাভেঞ্জার্স পি ৫,
স্পর্শক পি-৬, দুরন্ত পি৭, এলিগ্যান্ট পি৮,প্রত্যয়ী পি-৯, স্পার্টান পি ১০,উদ্দীপ্ত পি-১১, দুর্বার পি-১২, সংশপ্তক পি-১৩, দীপ্তাক্ষ পি-১৪ এবং প্রদীপ্ত পি-১৫।

রাষ্ট্রীয় সীমাবদ্ধতায় ১৫ বছরে একটা মেডিকেল কলেজের যেসব সুযোগ -সুবিধা প্রাপ্য হওয়ার কথা, অত্যন্ত দু:খজনক ভাবে আমরা সেটা পাইনি। ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের বাসের জন্য, হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ এবং আরামদায়ক আবাসস্থলের জন্য কিংবা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মাল্টি মিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য আমাদের এখনো সংগ্রাম করে যেতে হয়। তবে আমরা এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক আস্থা,বিশ্বাস,ভালোবাসা আর সহযোগিতার প্রাচুর্য আমাদের সেইসব সীমাবদ্ধতাকে অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেশনাল পরীক্ষা থেকে শুরু করে আন্তঃ মেডিকেল বিতর্ক, কুইজ, আবৃত্তি, খেলাধুলা সব কিছুতেই আমাদের শিক্ষার্থীরা সব মেডিকেল কলেজকে পেছনে ফেলে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে নিয়ে আমাদেরকে বারবার গৌরবান্বিত করেছে। আমাদের গর্ব এবং প্রেরণা –আমাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।

১৮ ই নভেম্বর, পাবনা মেডিকেল কলেজ ডে। পাবনা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন-বর্তমান সকল শিক্ষার্থী- শিক্ষকদের কাছেই ১৮ ই নভেম্বর তাই, এক ঐতিহাসিক দিন এক অনন্য দিন, এক গৌরবময় দিন, এক আনন্দঘন উৎসবের দিন। আজকের এই শুভ দিনে পাবনা মেডিকেল কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই অপরিসীম ভালোবাসা আর নিরন্তর শুভেচ্ছা।

“জন্মলগ্ন শুভ হোক, পূর্ণ হোক ভালোবাসা,
সকল বাঁধা সকল কাজে,
সফলতার পূর্ণ সাজে, উপচে উঠুক বারি,
এই তব প্রত্যাশা”

ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
সাধারন সম্পাদক,
শিক্ষক সমিতি, পাবনা মেডিকেল কলেজ।